• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

ডিজিটাল বাংলাদেশে নতুন দিগন্ত

প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১  

ওয়াহিদ শরীফ

২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন বদলের সনদ 'রূপকল্প ২০২১'-এর আওতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুগান্তকারী পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। একটি সমৃদ্ধ ও জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী চারটি মাইলস্টোন দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা। বিগত এক যুগের কর্মযজ্ঞে ইতোমধ্যে আমরা 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এ বসবাস করছি এটা বলা যায়। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যিনি অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০০৯ সাল থেকে মূল কাজ শুরু হয়। এজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ডিজিটাল অর্থনীতি ও ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য বহুমুখী কর্মযজ্ঞ শুরু করে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ কাজের এক যুগ অতিক্রমের পর আমরা দেখছি- কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ সব খাতেই তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ব্যবহূত হচ্ছে। মূলত সারাদেশে একটি শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো গড়ে ওঠায় এটা সম্ভব হচ্ছে। এক সময় প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা, বর্তমানে তা ৩০০ টাকারও কমে পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে সুজলা-সুফলা গ্রামীণ জীবনে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বর্তমানে ১১ কোটিরও বেশি। দেশে মোবাইল সিম ইউজার প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি। এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন।

আমরা এখন গ্রামে বসে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকার ডাক্তার দেখাতে পারি, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকার বা অন্য কোনো এলাকার সেরা পণ্য ও সেবা অনলাইনে কিনতে পারি, ঘরে বসে সরকারি নানা সেবা গ্রহণ করতে পারি। এমনকি বাড়ির পাশের দোকান থেকে পণ্য কিনে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে ক্যাশলেস পণ্যমূল্য পরিশোধ করতে পারি। তথ্যপ্রযুক্তির সুফল এই যে প্রান্তিক এলাকায় পৌঁছে যাওয়া, এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এখন নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১' উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এখন 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২' উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা চলছে। দেশে ৩৯টি হাই-টেক/আইটি পার্ক নির্মীয়মাণ রয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সাতটিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে ১২০টি প্রতিষ্ঠান ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ১৩ হাজারের অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। হাই-টেক পার্কগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ধারণা করা হচ্ছে তিন লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে হাই-টেক/আইটি পার্কগুলোতে ২৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইসিটি খাত থেকে রপ্তানি ইতোমধ্যে আমরা এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছি। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে এখন আমরা দ্বিতীয় সেরা গন্তব্য। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে বছরে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তার গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা। যে প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহকদের দ্রুত সময়ে সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে পারবে সে প্রতিষ্ঠান তত দ্রুত এগিয়ে যাবে। বর্তমান বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর ক্রমবর্ধনশীল অফিস স্থাপন ও পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন-ভাতা, যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে সাশ্রয় ও ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে এই পদ্ধতিটির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে দ্রুতই। যদি এই শিল্পে আমরা ভালো করতে পারি তাতে বৈদেশিক আয় হতে পারে গার্মেন্ট খাতের চেয়েও বেশি। ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এখন একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রথম সারির অনেক প্রতিষ্ঠানের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সেবা যেমন- কল সেন্টার পরিচালনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, বিজনেস ডাটা এন্ট্রি/প্রসেসিং, হিসাবরক্ষণ, ডাটা অ্যানালিটিক্স, বিজনেস ফোরকাস্টিং, গবেষণা ও উন্নয়ন, বিক্রয়/বিপণন গ্রাহকসেবা ও যোগাযোগ ইত্যাদি আউটসোর্সিং করা হয়ে থাকে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানের পাশাপাশি বর্তমানে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ব্যাক-অফিস/ফ্রন্ট-অফিস সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিপিও কোম্পানিগুলো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। বর্তমানে এই শিল্পে নতুন বেশ কিছু সেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যার মধ্যে আছে ফাইন্যান্সিয়াল আউটসোর্সিং, গ্রাফিকস ডিজাইনিং, ইমেজ প্রসেসিং। ২০০৯ সালে দেশে বিপিও শিল্পের যাত্রা শুরুর পর থেকেই এর বিকাশ লক্ষণীয়। তাই বর্তমানে এই শিল্পের দেশীয় বাজার আরও উন্নত করার প্রয়াস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দেশের একমাত্র বিপিও সংস্থা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সম্প্রতি; কেননা পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই এর মাধ্যমে কাজ করে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিপিও শিল্পের বাজারমূল্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার এবং ইতোমধ্যে ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই শিল্পে। এই ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, বাক্কোর সঠিক তত্ত্বাবধান এবং বাক্কো সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য। সরকারের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগের ফলে কয়েক বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড, সাউথ অ্যাওয়ার্ড, গার্টনার এবং এ টি কারনিসহ বেশ কিছু সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এই উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে সঙ্গে নিয়ে ই-গভর্ন্যান্সসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশি কোম্পানির জন্য স্থানীয় বাজার আরও প্রসারিত হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও এ সংক্রান্ত সেবা খাতে (আইটি-আইটিইএস) বাংলাদেশের সম্ভাবনা ব্যাপক। এ ক্ষেত্রটিতে বিশ্বের অন্যতম প্রবৃদ্ধি হার দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। তাই এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে আইটি-আইটিএস সেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি ২০১৮ সালে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশের সফটওয়্যার খাতে বেশি চাহিদা রয়েছে ইআরপি, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরিসহ ডিজিটালাইজেশনের কাজে ব্যবহূত সফটওয়্যার। দেশের বাজারে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন ৮৮টির বেশি দেশ বাংলাদেশ সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। তবে আমাদের দেশ থেকে বড় ধরনের একক সফটওয়্যার রপ্তানি হাতেগোনা। এখন পর্যন্ত আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপিও, সার্ভিস রপ্তানি করছি বেশি। বিপিওর ক্ষেত্রে ব্যাংকের নানা কাজ, নানারকম সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে গ্রাফিকস, ওয়েবের কাজ হচ্ছে। সফটওয়্যার রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়াসহ এ খাতের উন্নয়নের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে সফটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানির মানে শুধু সফটওয়্যারে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের উন্নতি করছে। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি। বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের সফটওয়্যার নির্মাতাদের তৈরি ইআরপি সলিউশনের চাহিদা বেশি। সফটওয়্যার রপ্তানির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি পর্যায়ের ডিজিটালাইজেশনের কাজে বাংলাদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান ভালো কাজ করছে। ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবা দিতেও কাজ করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

হার্ডওয়্যার পণ্য তৈরিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন ছাড়াও স্যামসাং, নকিয়া, অপো, ভিভো, শাওমি, রিয়েলমি প্রভৃতি বহুজাতিক কোম্পানি দেশে স্মার্টফোনসহ ল্যাপটপ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিও করছে ওয়ালটন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) জরিপে বলা হয়, ৩০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের ৪৫ লাখ পোশাক শ্রমিক অবদান রাখছে। আর আসিয়ান দেশগুলোর ২৫ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অবদান রাখছে ৩৮২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানিতে, যা প্রায় ২০ গুণ। চতুর্থ বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), রোবোটিকস, ব্লকচেইন, ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের মেধা, সৃজনশীলতা এবং দক্ষতা যোগ হয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুগুণ। এখন আমাদের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে নজর দিতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিল্পবের দ্বারপ্রান্তে এসে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই।

অনলাইন লার্নিং পল্গ্যাটফর্ম কোর্সেরার বৈশ্বিক দক্ষতা সূচক বা 'গেল্গাবাল স্কিলস ইনডেক্স ২০১৯' (জিএসআই) অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ। ওই তালিকায় বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পারফরম্যান্স তুলে ধরা হয়েছে। ওই সূচকে দেখানো হয়েছে, ৯০ শতাংশ উন্নয়নশীল অর্থনীতি এখন ক্রিটিক্যাল স্কিল বা জটিল দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে যাচ্ছে বা ঝুঁঁকিতে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরিতে খাতওয়ারি কাজ করতে হবে।

স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে সরকারের নানা উদ্যোগে ভালো সুফল পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে আইডিয়া প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টের (বিগ) মাধ্যমে স্টার্টআপগুলোতে অনুদান দেওয়া, স্টার্টআপে বিনিয়োগ করার জন্য স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সরকারি ভেঞ্চার কোম্পানি, পাঁচ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে শেয়ার বাজারে যাওয়ার সুযোগ, শেয়ার বাজারে পৃথক এসএমই বোর্ড চালু করা, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ভেঞ্চার তহবিল পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন দেশে স্টার্টআপ বিকাশের পথ সুগম করে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১.৫ হাজার স্টার্টআপ রয়েছে। যাদের অধিকাংশই পরিচালনা করছে তরুণরা। স্টার্টআপে বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার।

করোনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল
মহামারি সামাল দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি সংগঠনগুলো। প্রযুক্তির সহায়তায় চালু রাখা সম্ভব হয়েছে জরুরি সেবাসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। করোনাভাইরাসের মধ্যে জনগণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় জরুরি সেবা সহজ করতে বিভিন্ন অনলাইন পল্গ্যাটফর্ম চালু করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। 
করোনাসংক্রান্ত নীতি-কৌশল গ্রহণে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্রাউডসোর্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ডিজিটাইজেশনের পথে বর্তমান সরকারের অগ্রগতির ফলেই এটি সম্ভব হচ্ছে। সরকারি তথ্য সেবার জন্য রয়েছে ৩৩৩ নম্বর। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইন পল্গ্যাটফর্মে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। তাছাড়া প্রযুক্তির সহায়তায় ৯৯৯- বাংলাদেশের জরুরি কল সেন্টারে বিনামূল্যে ফোন করে জরুরি মুহূর্তে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। জরুরি সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে কল সেন্টার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। কল সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে বাক্কো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরবচ্ছিন্ন সেবা চালু রাখতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করেছে এই কঠিন সময়ে। অন্যদিকে অনলাইনে ডিজিটাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বেড়েছে প্রচুর এই মহামারির সময়ে। এখনও অনেক ক্রেতা সাবধানতা অবলম্বন করে মার্কেটে না গিয়ে অনলাইন মাধ্যম থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। চালু হয়েছে একাধিক অনলাইন শপ। অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফিজিক্যাল স্টোর চালু করেছে। এগুলো তাদের পিকআপ পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে। মূলত ঢাকা শহরে ক্রেতাদের কাছে দ্রুত পণ্য পৌঁছে দিতে এমন শপ ও সেবা চালু করেছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা।

ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার এবং এ ক্ষেত্রে মেধাসম্পন্ন তরুণদের বেশি সংখ্যায় বেরিয়ে আসার ওপর এই খাতের সাফল্য অনেকটাই নির্ভরশীল। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এগিয়ে চলার কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত সক্ষম জনবল ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আরও বেশি করে নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রের কোনো দুর্বলতা বা অপব্যবহার যেন জনজীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। আমরা চাই, দু-এক দশকের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বিশ্বেই বাংলাদেশ একটি অনন্য নাম হয়ে উঠুক। শুধু শহরেই নয়, বরং জেলা-উপজেলা সদর ছাড়িয়ে গ্রাম, এমনকি প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার। আমাদের দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বর্তমান ধারা বজায় থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছে যাবে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –