• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পঞ্চগড়- জীবিতরাও যেখানে মৃত 

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০২১  

আজিম উদ্দিন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৯৯ বছর। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হলেও এখনো দিব্যি হাঁটাচলা করতে পারেন। পেতেন বয়স্ক ভাতা। হঠাৎ ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো উপায় না পেয়ে যান ব্যাংক ও সমাজসেবা অফিসে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান। সেখানেই জানতে পারেন কাগজে-কলমে তিনি আর বেঁচে নেই। নিজের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ৯৯ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ।

আজিম উদ্দিনের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের চেংমাড়ী এলাকায়। ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র এ বৃদ্ধ। একদিকে ভাতা বন্ধ আরেকদিকে জীবিত থেকেও নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে মৃতের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি। পরে নির্বাচন কমিশনে মৃতের তথ্যটি সংশোধনের জন্য আবেদন করেন আজিম উদ্দিন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি নাকি মৃত তাই তারা ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মরার আগেই কীভাবে মৃত হলাম বুঝতে পারছি না। আমার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটবে কখনো ভাবিনি। যারা এমনটি করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি। 

শুধু আজিম উদ্দীনই নয়; পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার প্রায় অর্ধশত মানুষের একই অবস্থা। ধরাধামে এখনো তারা জীবিত রয়েছেন। করছেন নিয়মিত কাজকর্মও। কেউ বা বার্ধক্য নিয়ে পড়ে রয়েছেন ঘরে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে সার্ভারে তাদের দেখানো হয়েছে মৃত। কেটে দেয়া হয়েছে তাদের নাম।
সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদফতরে সামাজিক ভাতাভোগীদের ডাটাবেজ তৈরির জন্য এমআইএস ডাটা এন্ট্রির সময় একের পর এক এমন ঘটনা বেরিয়ে আসতে থাকে। জীবিতদের মৃত্যুর খবরে ভুক্তভোগীরাসহ অবাক হয়েছেন স্থানীয়রাও। কোনোভাবেই তারা বিষয়টি মেলাতে পারছেন না।

এ ঘটনা এখানেই থেমে নেই। সার্ভারে মৃত হিসেবে নাম কেটে যাওয়ায় অনেকেই নানা দুর্ভোগে পড়েছেন। কারো কারো দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসা বয়স্ক ভাতা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার ৩০ জন ভুক্তভোগী মৃতের তালিকা থেকে নিজেদের নাম আবারো সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১২ জন, বোদা উপজেলার ১৩ জন, আটোয়ারী উপজেলার একজন ও তেঁতুলিয়া উপজেলার চারজন রয়েছেন। এমন ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বশীলদেরই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের ভুক্তভোগী মকবুল হোসেন বলেন, ইউপি সদস্য জাকারিয়া আমার কাছ থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ডটি নিয়ে বলে আপনার নাম কাটা গেছে। আপনি মৃত। কথাটা শুনে আমার মাথা ঘুরে গেছে। জীবিত মানুষটাকে মৃত বানালো কে তাকে একটু দেখতে চাই। কারা এমন কাজ করল তদন্ত করে বের করা হোক।

একই এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি মৃত হলে বয়স্ক ভাতা দাবি করি কীভাবে। এমনিই চলাফেরা করতে পারি না এর ওপর নতুন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় অধিবাসী মাসুদ রানা বলেন, আমাদের গ্রামের চারজনকে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে মৃত দেখানো হয়েছে। জীবিত থেকেও তারা সার্ভারে মৃত। তাই তাদের বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে গেছেন তারা। আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন কমিশন তাদের এ ভুল সংশোধন করবে। এছাড়া যারা খামখেয়ালিপনা কাজ করেছে তাদের বিচার করা হোক।

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক অনিরুদ্ধ কুমার রায় বলেন, জেলায় মোট ভাতাভোগী ৬৬ হাজার ৭৮৫ জন। এসব ভাতাভোগীদের এমআইএস-এ ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। এ সময় কিছু ভাতাভোগীদের তথ্য এন্ট্রি করা যাচ্ছে না। কারণ কারো ভোটার তালিকায় তথ্য গরমিল রয়েছে। জন্মসনদ ও ভোটার তালিকায় দুই রকম তথ্য রয়েছে। আবার কাউকে মৃত দেখানো হয়েছে। যাদের মৃত দেখানো হয়েছে তাদের নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তথ্য সংশোধন করা হলেই ভাতা দেয়া যাবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের সময় ভুলক্রমে এমনটি হতে পারে। তবে আমরা যাদের আবেদন পাচ্ছি দ্রুত সেটি সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আশা করি শিগগিরই বিষয়টি সংশোধন হয়ে যাবে। এছাড়া তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –