• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মহামানব যেদিন ফিরলেন

প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২১  

অমরেশ রায়

'ওই মহামানব আসে;/দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/মর্ত্য ধূলির ঘাসে ঘাসে'- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতো ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি বয়ে এনেছিল গোটা বাঙালি জাতির কাছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফেরার দিনটিতে মানুষ আবার ফিরে পায় প্রাণ। আনাচে-কানাচে বয়ে যায় উচ্ছ্বাসের ঢেউ।

আজ সেই ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এ মহান নেতার অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে চলমান 'মুজিববর্ষ'-এর মধ্যে দিনটি বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে চলছে 'মুজিববর্ষ', যা শেষ হবে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর। আর এ বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার এবং ১৬ ডিসেম্বর উদযাপিত হবে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী।

করোনার প্রকোপ অব্যাহত থাকায়, বিশেষ করে শীতের শুরুতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর প্রেক্ষাপটে আজকের দিনটি উদযাপিত হবে আলাদা আবহে, সীমিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। দিবসটিকে ঘিরে সরকার, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালন করবে।

যেভাবে ফিরলেন বাঙালির 'রাখাল রাজা':৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতি চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারামুক্তির পর দেশে ফেরেন। তার ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বিজয় পূর্ণতা পায়। তিনি নিজেই এ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন- 'অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা' হিসেবে।

এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা 'অপারেশন সার্চলাইট' বাস্তবায়নে নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা চালায়। এমন প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর অব্যবহিত পরই পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কারাগারে বন্দি রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে, ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকেই রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। 'মুজিবনগর সরকার' নামে খ্যাত এ সরকারের নেতৃত্বে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।

কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশও বিশ্ববাসীর কাছে তার নেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানালে বিশ্বনেতারাও তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন। পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দেয়।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোররাতে; খ্রিষ্টীয় বর্ষ হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সরাসরি অথবা টেলিফোনে কথা বলেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ অনেকের সঙ্গে।

পরদিন ৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে দেশের পথে যাত্রা করে ১০ জানুয়ারি সকালে নামেন ভারতের দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ দেশটির মন্ত্রিসভা, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক নেতা, তিন বাহিনী প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন জাতির পিতা।

১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। গোটা জাতি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) পর্যন্ত পথে পথে তাকে সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –