• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২১  

দিনাজপুরের সুগন্ধি চালের কদর দেশে-বিদেশে সমাদৃত। জনপ্রিয় হওয়ায় দিন দিন এ ধানের চাষ বাড়ছে। এ বছর সুগন্ধি ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার চারদিকে এখন ঘন সবুজের সমারোহ। ঢেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। কদিন পরই সবুজ ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। মাঠভরা ফসল দেখে কৃষকদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেবে আনন্দের ছোঁয়া।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগ বলছে, গত মৌসুমে পোকার আক্রমণ, কম ফলন আর ধানের দাম কম থাকায় এ বছর আবাদ কিছুটা কমেছে। তবে চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় এবং কৃষি বিভাগ তৎপর থাকায় রোগবালাই নেই বললেই চলে।

জানা গেছে, কয়েক বছরে জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। গত এক দশকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বেড়েছে অনেক গুণ। তবে জেলার সদর, বিরল, পার্বতীপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধান আবাদ হয়।

নাম শুনেই বোঝা যায় এটির উৎপাদনই হতো কেবল রাজা-বাদশাহদের রসনা বিলাসে। আজ রাজা-বাদশাহরা নেই, নেই তাদের বাদশাহীও। তবে থেকে গেছে বাদশাভোগ। এখনও ঐতিহ্য ধরে রাখতে দিনাজপুরে সামান্য পরিমাণে উৎপাদিত হয় সুগন্ধি বাদশাভোগ ধান। শুধু বাদশাভোগ নয়, আরও আছে চিনি কাটারি, জিরা ৩৪, জিরা কাটারি, জটা কাটারি, কাটারিভোগ, ফিলিপাইন কাটারি, কালো জিরা, চল্লিশ জিরাসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির সুগন্ধি ধান।

চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্রি গ্রামের কৃষক বাবুল রহমান জানান, সুগন্ধি ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ঘন বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু জায়গায় দুই একটি করে ধানের শিষ সাদা হয়ে গেছে। বাজারে ধানের দাম ভালো আছে এখন।

সদর উপজেলার ৪ নং শেখপুরা ইউনিয়নের দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের কৃষক বিকাশ রায় বলেন, আমি এবার ৩ একর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ করেছি। ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে সার, কিটনাশক ও ধান কাটা শ্রমিকের দাম বেমি। এখন দামটা ভালো পেলেই হয়। না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

মথুরাপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, আামি এবার সুগন্ধি ধান ২০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময় এসে ধানে পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। তাই খরচটা বেড়ে যাচ্ছে। ধান কাটার পর ধানের দামটা ভালো থাকলে লাভবান হব। ধানের দাম না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। 

চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্রি গ্রামের ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান বলেন, জিরা ৩৪ সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পারার্মশে এবার আমি ৫ বিঘা জমিতে সুগন্ধি ধান লাগিয়েছি। বর্তমান ধানের বাজার ভালো। ধান কাটার পরে বাজার ভালো থাকলে লাভবান হব। ধানে এবার মরা শিষ দেখা যাচ্ছে। তাই খরচটা বেড়ে যাচ্ছে।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধানের আবাদ চিরিরবন্দর উপজেলায় ।গত বছরের তুলনায় এ বছর সুগন্ধি ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরাও অনেক খুশি। উপজেলায় এবার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সুদন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জিরা-৩৪ আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান বলেন, সুগন্ধি ধান দিনাজপুরের একটি ঐতিহ্য। ইতোমধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে কাটারিভোগ এখন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধি। সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ সবসময়ই কৃষকদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –