• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোরীর নবজাতক নিয়ে বিপাকে পরিবার

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২১  

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ধর্ষণের পরে অন্তঃসত্ত্বা সেই বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী (১৫) কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে কন্যাসন্তান প্রসব করে সে।

বাক্প্রতিবন্ধী ওই কিশোরীর বাবা বলেন, গত শুক্রবার সকালে প্রসব বেদনা ওঠে। কথা বলতে না পারায় কান্নাকাটি করছিল। স্থানীয় এক ধাত্রী মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করাই। এরপরই মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলের সহায়তায় দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মা ও নবজাতক শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। 

এদিকে পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী ওই কিশোরী চলতি বছরের ২১ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয়। প্রতিবেশী এক নারী প্রায় সময় মন্দির ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে যেত। বিনিময়ে হাতে কিছু খাবার দিত। এই কারণেতিনি ডাকলেই চলে যেত সে। এক দিন ওই কিশোরী হাতে পায়জামা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসে। 

পরিবারের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কিছু বলতে পারে না। পরে মেয়ের মা ওই বাড়িতে গেলে সেখানে শয়নকক্ষে দিপু চন্দ্র রায় নামে একজনকে দেখতে পায়। প্রতিবেশী নারীকে মেয়ের কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। পাশাপাশি কারও কাছে অভিযোগ না করতে হুমকি দেন।

২১ আগস্ট রাতে ওই প্রতিবন্ধী কিশোরী বমি করতে থাকে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে পর দিন ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের সহযোগিতায় দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা চলে। চিকিৎসকের দেওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মেয়েটির পরিবার জানতে পারে, ওই কিশোরী ২১ সপ্তাহের গর্ভবতী। পরবর্তীতে গত ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে কন্যাসন্তান প্রসব করে সে।

ঘটনার পর দিন কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে দিপু চন্দ্র রায়সহ চারজনকে আসামি করে চিরিরবন্দর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই রাতেই দিপু চন্দ্র রায়কে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। 

এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবার। বিশেষ করে ধর্ষণের শিকার হওয়া প্রতিবন্ধী কিশোরীর বাবা একজন দিনমজুর ও মা প্রতিবন্ধী হওয়ায় নবজাতকের লালন-পালন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কিশোরীর চাচি শিশুটির তদারকি করছেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় প্রসব পরবর্তী জটিলতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করাও সম্ভব হচ্ছে না পরিবারটির পক্ষে। বাধ্য হয়ে ওসিসির সহযোগিতায় বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসকের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।

ওই কিশোরীর চাচা জানান, একটা প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে এমন একটি জঘন্য কাজ করবে বুঝতে পারিনি। এর সঠিক বিচার চাই আমরা। পাশাপাশি সরকারের কাছে অসহায় পরিবারটির জন্য কিছু একটা করার আবেদন জানাচ্ছি।

চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, মেয়েটির বাবার করা ধর্ষণ মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –