• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নিরাপদ সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছে খানসামার চাষীরা     

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২২  

স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে শীত মৌসুম থেকে পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ছাড়াই নিরাপদ সবজি চাষাবাদ করছেন দিনাজপুরের খানসামার চাষীরা। খানসামায় ৪.৮ একর জমিতে এই নিরাপদ সবজি চাষ হচ্ছে। 

বাসুলী গ্রামের চারদিকে সবুজ সবজির খেতে ভরা। এ গ্রামের প্রায় সবাই এ চাষে এগিয়ে এসেছে। এছাড়াও শুশুলী ও ফরিদাবাদসহ বিভিন্ন গ্রামেও চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত চালকুমড়া, করলা, পটল, শসা, বেগুন ও পানিকুমড়া ইত্যাদি। কৃষিক্ষেত্রে সবজি চাষে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার এবং নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ঠিক এসময়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে খানসামার বাসুলী গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা। তবে নিরাপদ এসব সবজির দাম অন্য সবজির চাইতে কিছুটা বেশি হবে বলে জানান কৃষকরা। এরপরেও এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।  নিরাপদ সবজি চাষ করা অধিকাংশ কৃষকই খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের বাসুলী গ্রামের বাসিন্দা। ইতিপূর্বেও এ এলাকায় নিরাপদ সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য পায়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর বাসুলী গ্রামে ১.৮ একর এবং উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ৩ একরসহ উপজেলার মোট ৪.৮ একর জমিতে নিরাপদ সবজি চাষ হয়েছে। এতে সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

নিরাপদ সবজির জমিগুলোতে দেখা যায়, খেতের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে সেক্সফেরোমন ফাঁদ। এটি হচ্ছে কীটপতঙ্গ দমন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিক বক্স ব্যবহার করা হয়। যার দুপাশে তিন কোণা ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকার শরীর থেকে নি:সৃত এক রকম রাসায়নিক পদার্থ বা স্ত্রী পোকার গন্ধ ব্যবহার করা হয় ফাঁদে। এর আকর্ষণে পুরুষ পোকা ফাঁদের দিকে ধেয়ে আসে এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। এতে করে জমির ফসল নিরাপদ থাকে। সেক্সফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় জমির ফসল নিরাপদ থাকে এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে জৈব সার ও কেচোঁ সার।

বাসুলী গ্রামের নিরাপদ সবজি চাষী আহমদ আলী বলেন, কয়েকবছর আগে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করে বিভিন্ন জাতের শাকসবজি আবাদ করেছি। জানাতাম না এতে ফসল বিষাক্ত হয় এবং এসব খেয়ে মানুষেরা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে জানতে পারি, কীটনাশক ব্যবহারে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানুষকে আর বিষ খাওয়াব না। বর্তমানে আমাদের গ্রামের সবাই নিরাপদ সবজি চাষ করছি। একই এলাকার আরেক চাষী সুমি আক্তারও একই কথা বলেন। 

খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় নিরাপদ সবজি চাষ করতে বাসুলী, শুশুলী ও ফরিদাবাদ গ্রামের কৃষকদের সংগঠিত করে জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য সম্মত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। স্বাস্থ্য সম্মত ফসল উৎপাদনের সুফল বুঝতে পেরে কৃষকেরা সহজেই এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক গ্রুপ, উঠান বৈঠকসহ হাতে-কলমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে এবং ক্রেতারাও নিরাপদ সবজি পাচ্ছে।
কে/ 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –