• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

৮ বছরে দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সাড়ে ৭শ স্বাভাবিক প্রসব

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২  

৮ বছরে দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সাড়ে ৭শ স্বাভাবিক প্রসব                    
বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৭০০-এর বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এর বেশিরভাগের অবস্থাই শোচনীয়। তবে কিছু কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এরই মধ্যে একটি হলো দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি। এটি স্থানীয় মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।

২০১১ সালে উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের পূর্ব অংশে সীমিত সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করে পূর্ব দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। এখানে বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা গর্ভকালীন জটিলতা কিংবা প্রসব সেবা দিতে প্রস্তুত থাকেন কর্মীরা। গত ৮ বছরে পূর্ব দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সাড়ে সাতশ নারীর স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে।

ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুলতান মাহমুদ বলেন, সরকারের সীমিত সেবায় উপকৃত হয়ে এলাকার কিছু মানুষ ক্লিনিকটির সেবার পরিধি বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়। এ জন্য সবাই মিলে একটি কমিটি তৈরি করি। কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্লিনিককে ৮ শতাংশ জমি দান করেন। এ জমির ওপর স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয় পাকা ভবন। কেনা হয় কিছু যন্ত্রপাতি। এ অবস্থায় ক্লিনিকটির দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় পার্বতীপুরের বেসরকারি সংস্থা ল্যাম্ব। এরপর থেকে ২৪ ঘণ্টা নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসব এবং গর্ভকালীন সেবা চালু করে তারা। 

২০১৫ সালের ৬ মে ল্যাম্বের সহযোগিতায় স্থানীয় নারীদের ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দিয়ে ছয়জনকে বেছে নেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার জন্য। এতে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসব সুবিধা, গর্ভকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী সেবাদানের ব্যবস্থা বেশ মজবুত হয় ক্লিনিকটিতে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ল্যাম্বের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গেলে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ক্লিনিক পরিচালনা কমিটি এখনো সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য জনপ্রতি দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়। কেউ এই টাকা পরিশোধে অপারগ হলে কমিটির লোকেরাই নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে তা পরিশোধ করে। এ চাঁদার টাকা জমা হয় নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে মাস শেষে ধাত্রী, আয়ার বেতনসহ ওষুধ কেনা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সম্পন্ন করা হয়। সীমিত পরিসরে ক্লিনিকের কার্যক্রম চালাতেও বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা প্রয়োজন হয়।

দুর্গাপুরের গ্রামের হুসনে আরা বলেন, হঠাৎ করে রাতে আমার প্রচণ্ড প্রসব বেদনা শুরু হয়। এত রাতে কোথায় যাব কী করব ভেবে না পেয়ে আমার স্বামী ও স্বজনেরা আমাকে ভ্যানে করে পূর্ব দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ক্লিনিকটির ধাত্রী সাবানু খাতুন সেখানেই সন্তান ভূমিষ্ঠ করার প্রস্তুতি নেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর অবশেষে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। 

পূর্ব দুর্গাপুরের গ্রামের শেফালি বানু বলেন, আমার প্রথম  সন্তান যখন জন্ম নেয় তখন সিজার করতে হয়। দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার সময় ক্লিনিকের আপারা আমাকে নরমাল ডেলিভারি করার জন্য অনুরোধ করে আমি ভয়ে রাজি হতাম না। কারণ আমার প্রথম সন্তানেই তো সিজার কার এবার নরমাল ডেলিভারিতে যদি কোনো সমস্যা হয়। পরে পরিবারর সদস্যদের অনুরোধে ক্লিনিকে গিয়ে নরমাল ডেলিভারি করার জন্য ক্লিনিকের আপারা চেষ্টা করে। আল্লাহর রহমতে নরমালে আমার মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। একদিকে আমার সিজারের টাকাও বাঁচল এবং বাড়ির পাশে মনের মত সেবাও পেলাম।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোফাখখুর ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্থানীয় মানুষের সচেতনতা আর সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে দুর্গাপুর গ্রামের এ কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখন সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও হয়ে উঠেছে গরিব মানুষের ভরসার জায়গা। রোগী আনা-নেওয়ার জন্য প্রথমে ক্লিনিকটিতে একটি ভ্যানের ব্যবস্থা করা হয়। পরে আমি সেখানে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা চালু করি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা.এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের যে মূল লক্ষ্য পূর্ব দুর্গাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক সেটি শতভাগ অর্জন করেছে ।পার্বতীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ক্লিনিকটি যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ক্লিনিকটি পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –