• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

অচিরেই মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ!

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২০  

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক মুসা কালিমুল্লাহ। বিশ্ব হ্যাচারী নামে পরিচিত পার্বতীপুরের এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন ধরে নানা কারণে অবহেলিত থাকলেও দায়িত্ব নেয়ার পর তার অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবর্তন হওয়ার পথে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর করোনায় লকডাউনকে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় আঘাত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ অবস্থায় একটি সু-সংবাদ বয়ে এনেছে দিনাজপুর পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার।

দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম জনপদের দুই বিভাগ রংপুর এবং রাজশাহী’র ১৬ জেলার ১২৫ উপজেলার মাছ চাষিদের জন্য সু-সংবাদটি হচ্ছে, চলতি ২০২০ উৎপাদন বছরে লোনা পানির মাছ গলদা চিংড়ি এবার থেকে স্বাদু বা মিঠা পানি তথা এ অঞ্চলের পুকুরে চাষ করা যাবে দাবি করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা ।

মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার, পার্বতীপুর দিনাজপুর এর খামার ব্যবস্থাপক মো. মুসা কালিমুল্লাহ এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমের মাছ চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে গলদা চিংড়ি চাষ করে আসছেন। তারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার উৎপাদিত চিংড়ি মাছ বিদেশে রফতানি করে থাকেন।

তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের মাছ চাষিদের স্বপ্ন ছিল তারাও তাদের পুকুর বা জলাশয়ে চিংড়ি চাষ করবেন। তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার খামারে গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা (পিএল) এবং জুভেনাইল উৎপাদনে কাজ শুরু করেছেন। তিনি জানান, গত ৭ এপ্রিল পায়রা নদী, আমতলী, বরগুনা থেকে চিংড়ির মা মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে পেকুয়া, কক্সবাজার থেকে লোনা পানি সংগ্রহ করা হয়।

তিনি জানান, গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা উৎপাদনের জীবন চক্রের শুরুতে লবণ পানির প্রয়োজন (ব্রাইন ওয়াটার) হয়। খামারে পিএল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ও জুভেনাইল ৫০ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা ও গবেষণা করে এরইমধ্যে প্রায় ২০ লাখ লার্ভা ৬টি এল.আর.টিতে (লার্ভি রিয়ারিং ট্যাংক) লালন পালন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে লার্ভার বয়স ১৯ দিন অতিক্রম করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লার্ভার সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। সবকিছুর অনুকূল পরিবেশ থাকলে গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ২৮ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে শুধুমাত্র রংপুর রাজশাহী বিভাগে নয়, সারাদেশের মাছ চাষিরা এখান থেকে সংগ্রহ ও চাষ করে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। এই মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক মাছ চাষিদের জন্য আরো একটি সু-সংবাদ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মাছ চাষিরা পুকুরে রুই জাতীয় মাছের সঙ্গে অথবা এককভাবেও স্বাদু বা মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। মুসা কালিমুল্লাহ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর খামার ব্যবস্থাপক হিসেবে পার্বতীপুরে যোগদান করেন।

এর আগে তিনি ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ উৎপাদন বছরে কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপদন খামারে গলদা চিংড়ি চাষসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদনে সরকারের দেয়া লক্ষ্যমাত্রার অধিক অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে শুধুমাত্র গলদা চিংড়িই নয় দেশীয় জাতের মাছ শিং, মাগুর, গোলশা ট্যাংরা, পাবদা এবং কুচিয়াসহ অন্যান্য মাছ চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম এবং মৎস্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহা. সায়নার আলম খামার ব্যবস্থাপককে সার্বিক সহযোগিতা ও দেখভাল করে আসছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, মুসা কালিমুল্লাহ এর আগে কুড়িগ্রাম জেলায় তিন উৎপাদন বছরে চিংড়ির পিএল উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। ফিল্ড কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরেও তিনি সফল হবেন।

মৎস্য অধিদফতর রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহা. সায়নার আলম জানান, এই মুহূর্তে তার সফলতার সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না। কেননা নির্দিষ্ট সময় এখন পার হয়নি। তবে চিংড়ি চাষে মুসা কালিমুল্লার সফলতার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রংপুর বিভাগের এ কর্মকর্তা।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –