• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুফলঃ ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে আলফাডাঙ্গা ও সালথা

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩  

‘আগের ত্যা ভালোই আছি। এই হাস-মুরগি পালতেছি। গতবার ১০ হাজার টাকা বেঁচছি। এই বছরও ৬ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি বেঁচছি। এহনো আমার কাছে ২০ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি আছে। স্বামীর রোজগার আর আমার এই আয় দিয়্যা এহন আমাগের ভালোই আয়-উন্নতি হইতেছে। সরকারের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আইস্যা এহন নিজেগের জীবনডারে গুছায় নিবার পারতেছি।’

এক বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবযাপনের চালচিত্রের তথ্য সংগ্রহে গেলে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ছবেদা বেগম (২১) এই কথাগুলো বলেন। 

ছবেদা জানান, মাত্র এক বছর আগেও তারা ছিলেন ভূমিহীন। মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁইও ছিলো না। স্বামী রাসেল মোল্যা একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকতেন রাস্তার পাশে ঘর তুলে। এখন নিজেদের একটা ঠিকানা হয়েছে। যেটি তাদের জীবনসংগ্রাম এগিয়ে নিতে জীয়নকাঠির মতো কাজ করেছে।

ফরিদপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এই স্বপ্ননগর। এখানে প্রায় তিনশ’ ঘর তৈরি করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য। এই স্বপ্ননগরে ভূমিহীনদের জমিসহ ঘরের পাশাপাশি সেখানে স্থাপন করা হয়েছে একটি মসজিদ, জেলা প্রশাসক স্কুল নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি মাছ বাজার। আলফাডাঙ্গার উপর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ভাঙনের কবলে নিঃস্ব পরিবারসহ ভূমিহীনদের আশ্রয় এই স্বপ্ননগর। সেখানে ঘর পেয়েছেন ৬৫ বছর বয়স্ক সচিন দাস (৬৫)। স্ত্রী সবিতা দাস (৫৬) ও তিনি দুজনে এখন বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করছেন ধামা, কুলা, খলই, ডালাসহ গৃহস্থালী নানা কুটিরশিল্প সামগ্রী।

সচিন বললেন, আগেও এসব হাতে তৈরি জিনিসপত্র বেঁচে দিন চলতো। কিন্তু নিজের কোনো ঠিকানা না থাকায় কোনো ভরসা ছিলো না। মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁইও ছিলো না। এখন নিজেরা এসব বিক্রি করে সংসার গোছানোর স্বপ্ন দেখতেছি। ৩ ছেলে নিয়ে খেয়েপরে বাঁইচ্যা আছি। বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) তাকে সহায়তা করলে আরো এগিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে জেলার নগরকান্দা উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করার পর এবার জেলার আলফাডাঙ্গা ও সালথা এ দুটি উপজেলাকেও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের আরো অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এ দুটি উপজেলাকেও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন।

জানা গেছে, সরকার ঘোষিত ‘মুর্জিব শতবর্ষে থাকবে না কেনো গৃহহীন’ কর্মসূচিতে ‘সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’এর আওতায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় তিনটি ধাপে ৭৩৫টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘরে উপহার দেওয়া হয়েছে। সালথা উপজেলায় ঘর পেয়েছে ৬৩৩টি ভূমিহীন পরিবার। জেলায় সবমিলিয়ে প্রায় সাত হাজার ভূমিহীন পরিবার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী রয়েছেন। এরইমধ্যে তারা তাদের ঘরগুলোতে কেউ কৃষি খামার, কেউবা হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলছে। ঘরের আঙিনায় লাগানো হয়েছে পুঁই, সিমসহ নানাপ্রকারের সবজি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ফরিদপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমাদের যে কর্মপরিকল্পনা ছিলো সেটি খুব ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে ৪৪৭টি ঘর উদ্বোধন করবেন। 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –