• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইন্দোনেশিয়ায় নামাজের জায়গা সবচেয়ে বেশি

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২১  

ইন্দোনেশিয়ায় মুসল্লা বা নামাজের ব্যাপকতা দেখলে যেকোনো মুসলমানের হৃদয় প্রশান্ত হয়ে যাবে। নামাজের স্থানের এত ব্যাপকতা অন্য কোনো মুসলিম দেশে আছে বলে জানা নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নামাজের জন্য প্রধান ব্যবস্থাপনা মসজিদ। অফিস-আদালতে, কল-কারখানায়, শিক্ষা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বড় পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে এবাদতখানা বা নামাজের কক্ষ থাকে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বিশেষ করে বালি, সুরাবায়া, জার্কাতায় নামাজের স্থান বা নামাজ কক্ষের ব্যবস্থাপনা বিস্ময়কর। আরো বিস্ময়কর হলো নারীদের শালীনভাবে নামাজ পড়ার দৃশ্য।

মুসল্লা অর্থ নামাজের স্থান। এ শব্দ পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ আছে। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ খুবই নম্র-ভদ্র, অমায়িক ও সহনশীল। আর ইন্দোনেশিয়ার নারীদের ধর্ম পালন পুরুষের চেয়ে কম নয়। শতকরা ৮০ ভাগের বেশি ইন্দোনেশীয় নারী মাথায় ওড়না, স্কার্প রাখে। নারীরা কর্মঠ। তাদের বিচরণের ব্যাপকতা ইরান ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম দেশে দেখা মেলা ভার। এমনকি প্রগতিশীল মুসলিম দেশ মিসর, তুরস্ক, ইরাক, জর্ডানের চেয়েও মনে হয় ইন্দোনেশীয় নারীরা বেশি কর্মদক্ষতার পরিচয় দেয়।

ইন্দোনেশিয়ার মসজিদগুলোতে সুন্দর, স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন পাওয়া যায়। মসজিদ যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তেমনি টয়লেট, ওজুখানাও। তবে তাদের মসজিদের টয়লেটে দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করা ও দাঁড়িয়ে ওজু করার ব্যবস্থা রয়েছে। তারা হয়তো প্যান্ট পরে বিধায় বসে এ কাজ করতে অসুবিধা মনে করে। তাই ওজর হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো নামাজকক্ষের গুরুত্ব। বিভিন্ন বাগান, সাগরপার, বিমানবন্দরসহ এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে একাধিক নামাজকক্ষের ব্যবস্থা পাওয়া যাবে না।

বালি দ্বীপের বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে প্রায় দুই শ মিটার অন্তর অন্তর নামাজকক্ষ আছে। জার্কাতা থেকে সুমাত্রা যেতে এক শ কি.মি. দূর পর্যন্ত হাইওয়ের দুই পাশে অসংখ্য নামাজকক্ষ। মসজিদ তো আছেই। ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়া থেকে বিশ্বখ্যাত ১৫/২০ কি.মি. দীর্ঘ ব্রিজ অতিক্রম করে অন্য একটি দ্বীপে গমন করলে পথে মসজিদের পাশাপাশি রাস্তার দুই ধারে ঘন ঘন মুসল্লা। এসব নামাজকক্ষ সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ছোট আকৃতির হলে ১০-১৫ জন, বড় আকৃতির হলে ২০-৩০ জন একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। সঙ্গে অজুখানা। এতেও বামপাশে নারী ও ডানপাশে পুরুষ। এখানেও সুন্দর একাধিক তাকে কোরআন রাখা আছে। আরো রাখা আছে লম্বা কোর্তা, লুঙ্গি। অর্থাৎ নামাজ পড়তে এসে কয়েক মিনিটের জন্য কারো কাপড় পাল্টাতে প্রয়োজন হলে তার জন্য এই ব্যবস্থা।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে জজিরাতুল আরবের মহান আরবীয়গণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামের আগমন বলে স্বীকৃত। বিশ্বের প্রাচীনকাল থেকে আরবীয়রা ব্যবসার উদ্দেশ্যে সাগর, মহাসাগর পাড়ি দিতেন। সেকালের দূরযাত্রায় সাগরপথই ছিল প্রধান মাধ্যম। ইন্দোনেশিয়ায় সুমাত্রা দ্বীপ দিয়ে ইসলামের আগমন ঘটেছে বলে স্বীকৃত।

বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় শতকরা ৮৮ জন মুসলমান। বিশ্বের বুকে প্রথম সংখাধিক্য মুসলমানের দেশ। এরপর ভারতবর্ষের তিন দেশ। যথা—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান। ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ২১ হাজার নর-নারী হজে আসেন। বাংলাদেশ থেকে যায় এক লাখ ২৭ হাজার। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশের মুসলমানদের অনেক কিছু শেখার আছে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –