• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইসলামের জন্য বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক অবদান

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২১  

শফিকুল আলম রেজা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন উদার চেতনার অধিকারী একজন খাঁটি ঈমানদার মুসলমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দেশে ইসলামের প্রকৃত পরিচর্যাকারী। পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন এবং হজ ভ্রমণ কর বাতিল করেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা ইতিহাসে চিরদিন লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৩ বছর এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ইসলামের খেদমতে যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, পৃথিবীতে তার দৃষ্টান্ত বিরল।

বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের উন্নয়ন করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। স্বাধীন দেশের ধর্মীয় উগ্রবাদ নির্মূলের সাফল্যও তার সরকারের বড় অবদান। বাংলাদেশকে সব ধর্মের সব মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতেবঙ্গবন্ধু ছিলেন সদা সচেষ্ট। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালীন শাসনামলে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণার্থে গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের অনুগমী। তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকরী নানামুখী ব্যবস্থা।

তিনি যেমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, তেমনি বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি।

তার উদ্যোগেই ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, প্রচার-প্রসার ও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামগ্রিক জীবনকে মহান ধর্ম ইসলামের কল্যাণময় স্রোতধারায় সঞ্জীবিত করার লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বায়তুল মোকাররম সোসাইটি’ এবং ‘ইসলামিক একাডেমি’ নামক তৎকালীন দুটি সংস্থার বিলোপ সাধন করে এ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন সরকারি অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বড় সংস্থা হিসেবে দেশ-বিদেশে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে পবিত্র কোরআনের বাংলা তরজমা, তাফসির, হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূল (সা.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী আইন ও দর্শন, ইসলামী অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবি ও মনীষীদের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকার প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয়, আর্ত-মানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বৃহত্তর কলেবরে ২৮ খণ্ডে ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২ খণ্ডে সিরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে।
বঙ্গবন্ধুর গৃহীত ইসলামী কর্মপরকিল্পনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উল্লেখ করা যতে পারে। যেমন-

বিশ্ব ইজতেমা: বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সামাধান করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে তুরাগ নদীর তীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। সেখানেই আজ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা করে আসছে তাবলিগ জামাত।

কাকরাইলের মারকাজ মসজিদ: তাবলিগ জামাতের মারকাজ বা কেন্দ্র নামে পরিচিত কাকরাইল মসজিদের সম্প্রসারণ করে রমনা পার্কের অনেকখানি জায়গার প্রয়োজন যখন দেখা দেয়, তখন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় কাকরাইল মসজিদকে জমি দেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে করে দেন।

আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন: ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন করেন এবং এ যুদ্ধে বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থনে ১ লাখ পাউন্ড চা, ২৮ সদস্যের মেডিকেল টিমসহ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী পাঠানো হয়।

মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন : বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্থান করে নেন। ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মুসলিম নেতাদের সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরেন। এর ফলে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব উজ্জ্বল হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।

এবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

আল-কোরআনের ডিজিটালাইজেশন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের ৩১টি কামিল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা, যোগ্য আলেমদের ফতোয়া প্রদানে আদালতের ঐতিহাসিক রায়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও সম্প্রসারণ সুউচ্চ মিনার নির্মাণ, দক্ষিণ সাহান সম্প্রসারণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও পূর্ব সাহানের ছাদ নির্মাণ, মহিলাদের নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ, সাহানের স্থান সম্প্রসারণ ও কমপ্লেক্স নির্মাণ; ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ করা হয়।

বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও রাজকীয় সৌদি আরব সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর; হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার; জেদ্দা হজ টার্মিনালে ‘বাংলাদেশ প্লাজা’ স্থাপন; আশকোনা হজক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রী প্রেরণ; হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি সরকারের স্বীকৃতি; মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থান ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি; শিশু ও গণশিক্ষা এবং কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমে মাহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতিতে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ; কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতির জন্য আলাদা কমিশন গঠন; ১০০০টি বেসরকারি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ; প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নাধীন; ইমাম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম; ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন; ইসলামী প্রকাশনা প্রকল্প বাস্তবায়ন; ইসলামিক মিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।

মসজিদ পাঠাগার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন; ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তর; জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ইসলাম শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতাদের কাছে বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা; মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান; চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ন্যস্তকরণ; পবিত্র রমজানে মসজিদে মসজিদে ব্যাপক কোরআন শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা; সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ; আন্তর্জাতিক হিফজ, কিরাত ও তাফসির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্য; জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদিত প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মডেলে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের ঘোষণা ও বাস্তবায়ন; প্রতি জেলা ও উপজেলা সদরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আদলে মসজিদ নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মসজিদ সরকারিকরণ এবং একটি গ্রাম একটি মক্তব চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়।

ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা ‘কওমি জননী’ উপাধী প্রাপ্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অবদান ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার সরকার কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশব্যাপী ১০ হাজার কেটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। এই করোনাকালে মসজিদের ঈমাম ও মোয়াজ্জিনদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এজন্যই দেশের মানুষ তার এমন ইসলাম অনুরাগী নেত্রী ও সরকার প্রধানকে তাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে ঠাঁই দিয়েছে।

লেখক: প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –