• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

ঈমানি শক্তি হ্রাস পাওয়ার আলামত

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২১  

তাওহিদ ও রিসালাতের প্রকাশ্য স্বীকৃতি, কর্মে প্রতিফলন, সার্বক্ষণিক অন্তকরণে ওই চেতনা জাগরুক রাখার নাম ‘ঈমান’। ঈমানের প্রতিশব্দ ‘তাসদিক’ অর্থাৎ সত্য বলে স্বীকার করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাসে অবিচল এবং তা থেকে বিচ্যুৎ হয় না...এবং এরাই তো প্রকৃত সত্যনিষ্ঠ।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৫)

ঈমানের বিষয়বস্তু সাতটি, যে ব্যক্তির মধ্যে এসবের প্রতিফলন যত বেশি সে তত বেশি পরিপূর্ণ। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তরেরও অধিক। মাও. আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর ব্যাখ্যায়, যার সম্পর্ক জিহ্বার সঙ্গে সাতটি, অন্তরের সঙ্গে ৩০টি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে ৪০টি।

এ জন্যই শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক ভালো কাজকে ঈমান বলা হয়, যার ওপর পরকালে মুক্তি নির্ভরশীল।’ আর হাদিসের ভাষায়, সে-ই ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে যে আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) ইসলামকে দ্বিন ও মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। (মুসলিম)

বর্তমানে ঈমানি শক্তির ক্রমহ্রাসের প্রবণতা লক্ষণীয়। অনেকেই বলেন, আমার অন্তর কঠিন হয়েছে, নামাজ-রোজায় শান্তি পাই না, কোরআন তিলাওয়াতে মন নরম হয় না, সহজেই পাপ কাজে জড়িয়ে যাই ইত্যাদি। এমন অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য প্রিয়নবী (সা.) দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার অন্তর দ্বিনের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখো।’ ঈমানিশক্তি হ্রাসের লক্ষণ হলো—

পাপ ও নিষিদ্ধ কাজ

মুনাফিকরা গোপনে কুফর লালন করে। মুমিন পাপকাজে লজ্জিতবোধ করে এবং তা গোপন রাখে। আর দুর্বল ঈমান ও পাপের কারণে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘...তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে, তা তো পাথরের মতো অথবা তার চেয়েও কঠিন...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৭৪)

ইবাদতে অমনোযোগ

ঈমানি শক্তি হ্রাস পেলে নামাজ-রোজা, তিলাওয়াত, মুনাজাত সবই পানসে ও একঘেয়ে মনে হতে থাকবে এবং এতে পরিতৃপ্তি উঠে যায়। এ জন্যই হাদিসে আছে, ‘অমনোযোগী অন্তরের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।’ (তিরমিজি)

ইবাদতে অলসতা

ঈমানি শক্তি হ্রাসের কারণে ইবাদতে অলসতা দেখা যায়, এটা মুনাফিকেরও লক্ষণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা নামাজে দণ্ডায়মান হয় অলস-অবহেলার শৈথিল্যে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)

ঈমানি শক্তি হ্রাসের কারণে মানুষ ফরজ হওয়ার পরও হজে যেতে বিলম্ব করে, জাকাতের হিসাব করে তা আদায়ে তৎপর হয় না, নামাজের জামাত ধরতে পারে না, সুন্নতে মুয়াক্কাদার গুরুত্ব বোঝে না, ফরজে কিফায়া ছেড়ে দেয়। এমন অবস্থায় নফল ইবাদত, ইসতিগফার, তাওবা গুরুত্ব হারায়। ঈমানি শক্তি হ্রাসের কারণে মানুষ মানুষের প্রতি অভিযোগপ্রবণ হয়, প্রিয় ও প্রয়োজনে মানুষের প্রতি ঘৃণা বেড়ে যায় ও সহনশীলতা কমে যায়।

কৃপণতা

কৃপণতা ঈমানি শক্তির পরিপন্থী। অথচ ঈমানি শক্তি হ্রাস পেলে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ, আগ্রহ ও সহানুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তো তারা, যাদের আল্লাহর পথে ব্যয়ের আহ্বান করা হচ্ছে, অথচ তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে, ...আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৩৮)

নিজে আমল না করে অন্যকে আমল করতে বলা

ঈমানি শক্তি হ্রাসের কারণে বেআমল ব্যক্তি অন্যকে আমলের নসিহত করে থাকে এবং এটা স্পষ্ট মুনাফিকি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা করো না, তা কেন বলো? তোমরা যা করো না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই গর্হিত কাজ।’ (সুরা সফ, আয়াত : ২-৩)

ঈমানি শক্তি হ্রাসের বহু কারণ

ক. ছোটখাটো ইবাদতমূলক কাজকে গুরুত্ব না দেওয়া। খ. ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ অস্বীকার ও ছিন্ন করা। গ. ধর্মীয় বিষয়ে অহেতুক তর্কে জড়ানো। ঘ. অতীব দুনিয়াদারি প্রবণতা। ঙ. শরিয়তের সীমা অতিক্রম করা। দীর্ঘদিন ধর্মীয় পরিবেশের বাইরে থাকা। ছ. দীর্ঘ হায়াতের আশায় ইবাদতে নির্লিপ্ততা। জ. অতিভোজন, অতিনিদ্রা, অকাজে রাত্রি জাগরণ, অতিরিক্ত হাস্যরস ইত্যাদি। মহান আল্লাহ আমাদের খাঁটি ঈমানদার হিসেবে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –