• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

এক ওসিতেই পাল্টে গেছে ঘোড়াঘাট

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২১  

দিনাজপুর জেলার মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সময়ে বেশ আলোচিত এবং সমালোচিত থানা ঘোড়াঘাট। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি বাস ভবনে ঢুকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে তার বাবাও আহত হন।

বিষয়টি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বে সমালোচনায় আসে। এ ঘটনার ঘটনার ১০ দিনের মাথায় ঘোড়াঘাট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে ওসি হিসেবে রংপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আজিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

নবাগত ওসি হিসেবে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আজিম উদ্দিন ঘোড়াঘাট থানায় যোগদান করেন। ভীতিকর-গুমট পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের সহযোগিতায় পাল্টে দিয়েছেন উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। পর থেকেই পাল্টে দিয়েছেন পুরো থানার চিত্র।

মাসিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক কর্ম মূল্যায়নে পর পর তিনবার দিনাজপুর জেলার ১৩টি থানার ভেতরে শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করেছেন। পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে রংপুর রেঞ্জের ৬১টি থানার ভেতরেও পরপর দুবার শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে নির্বাচিত হন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে আদিবাসী কিশোরীকে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় মাত্র ৪৫ মিনিটে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। একদিন পরই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা।

একই মাসে মিলন নামের এক কিশোরকে হত্যাচেষ্টা এবং রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অভিযোগ দেয়ার একদিনের ভেতর আসামি শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া রিকশাও। এই দুটি ঘটনাসহ সার্বিক কর্ম মূল্যায়নে গত জানুয়ারি মাসে দিনাজপুর জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ থানার সম্মান অর্জন করেন ওসি আজিম উদ্দিন।

এছাড়া ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে আলোচিত পেয়ারা বেগম হত্যায় ক্লুলেস মামলায় দ্রুত রহস্য উদঘাটন করে মূল আসামিকে গ্রেফতার করে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। এই ঘটনাতেও মূল আসামি পেয়ারা বেগমের স্বামী আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেন।

১৯ মে মিনি ট্রাকে গোমূত্রের সূত্র ধরে দুটি গরু উদ্ধারসহ পাঁচ চোরকে গ্রেফতার করা হয়। গরুগুলো চুরি হয় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে। উদ্ধার হয় জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় একটি হাটে বিক্রির সময়। এই চোর ও গরুগুলো উদ্ধার করতে ২৪ ঘণ্টা টানা অভিযান চালাতে হয় ঘোড়াঘাট থানা পুলিশকে।

গুরুত্বপূর্ণ এই সব ঘটনার পাশাপাশি মাদক উদ্ধার করে নিয়মিত মামলা রুজু এবং মাদক ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেফতার, বিভিন্ন মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার করাসহ সার্বিক কর্মমূল্যায়নে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে রংপুর রেঞ্জের মধ্যে শ্রেষ্ঠ থানার সম্মান অর্জন করেন ওসি আজিম উদ্দিন। রেঞ্জের পাশাপাশি এই দুই মাসে দিনাজপুর জেলার মধ্যেও শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে নির্বাচিত হন হন তিনি।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি শুধু শ্রেষ্ঠত্বেই নয়। খুবই অল্প সময়ে তিনি পুরো উপজেলা জুড়ে নিরবচ্ছিন্ন পুলিশি সেবা এবং মানবিকতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তিনি উপজেলার অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

গত মার্চ মাসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর ফোনে এক শতবর্ষী বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে গভীর রাতে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তা। পাশাপাশি স্বাভাবিক চলাচলে অক্ষম ওই বৃদ্ধাকে দিয়েছেন হুইল চেয়ার।

এছাড়াও ১০ মে ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক বৃদ্ধা ভাঙা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এমন সংবাদ শুনে তার বাড়িতে ছুটে যান ওসি আজিম উদ্দিন। ওই বৃদ্ধা দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে ভাঙা ঘরে বসবাস করে আসছেন। হালকা বৃষ্টিতে তার ঘর পানিতে ভরে ওঠে।

বৃদ্ধার খোঁজখবর নিয়ে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসেন মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তা। পাশাপাশি দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধাকে একটি ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

উপজেলার সুশীল সমাজের কয়েকজন বলেন, আমাদের থানার বর্তমান ওসি দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি করে। দিন কিংবা গভীর রাত তাকে থানাতে অথবা বাইরেও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। যা আমাদের থানার অন্যান্য ওসিদের ইতিহাসে বিরল। শুধু নিজ দায়িত্ব পালন নয়, পাশাপাশি জনপ্রতিনিধির মতো তিনি অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি এবং মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে মরিয়া হয়ে থাকি। পাশাপাশি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কোনো অপরাধী বের হয়ে যেতে না পারে এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন হয়রানি হতে না হয় সেই বিষয়ে আমি অত্যন্ত সচেতনতা অবলম্বন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘোড়াঘাট ছোট্ট একটি থানা। তবে ছোট্ট এই থানাতে অপরাধের সংখ্যা তুলনামূলক কয়েক গুণ বেশি। যোগদানের পর থেকেই আমার লক্ষ্য এই থানাকে রোল মডেল থানা হিসেবে গড়ে তুলব। আর এই প্রয়াস আমাকে পুরস্কার অর্জনের লক্ষ্যে অভীষ্ট করেছে।’

ওসি বলেন, ‘নিজের ওপর দায়িত্ব এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করলে যেকোনো পুলিশ সদস্য পুরস্কৃত হতে পারে। শুধু প্রয়োজন প্রবল পরিশ্রমের ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল ধরে রাখা। মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ে মামলা দায়ের, আসামি শনাক্ত ও আসামি গ্রেফতার, ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি আমি বারংবার পুরস্কৃত হবার অন্যতম একটি কারণ সিডিএমএস (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)-এ শতভাগ তথ্য আপডেট করা। অপরাধ কমাতে এবং অপরাধীদের পূর্বের অপরাধ সংগঠনের সকল তথ্য যাচাই বাছাইয়ে সিডিএমএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমি এবং থানার প্রতিটি কর্মকর্তা সিডিএমএস-এ শতভাগ তথ্য আপলোড করি। শুধু আপডেট নয়, বিভিন্ন মামলায় তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করি আমি।’

ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন সম্পর্কে জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি সঙ্কটময় সময়ে তাকে ঘোড়াঘাট থানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি সেই দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি মানবিক বিষয় নিয়েও তিনি কাজ করছেন। পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। আমি প্রত্যাশা করি অপরাধীদের বিরুদ্ধে তার জোরালো ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।’

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –