• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখতে তেঁতুলিয়ায় ছুটছে মানুষ

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১  

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবারের মতো এবারও খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছবির মতো ভেসে ওঠা শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা যাচ্ছে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল। দেশের সীমানা পেরিয়ে যাদের এই পর্বত দেখার সুযোগ হয় না, তারা এ দৃশ্য উপভোগ করতে তেঁতুলিয়ায় ছুটে আসছেন।   
 
হেমন্ত ও শীতের সময়ে একমাত্র পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখা যায় হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। মাউন্ট এভারেস্ট ও কেটুর পরে এর স্থান। পর্বতের কিছু অংশ ভারতের সিকিম ও কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত। প্রতি বছর অক্টোবর -নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখা গেলেও এ বছর আকাশ পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত থাকায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। পঞ্চগড়ের সীমান্ত নদী মহানন্দা তীরের ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো ও পিকনিক কর্নার থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য খালি চোখে দেখা যায়। 

সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনও শুভ্র, গোলাপী আবারও কখনও লাল রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফ আচ্ছাদিত এই পর্বত চূড়া। পাহাড়টির সৌন্দর্য উপভোগ করার উপযুক্ত সময় ভোর ও বিকেল। তখন পর্বত চূড়াটি পোড়ামাটির রঙ নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসলে তখন রঙ হয় সাদা। যেন আকাশের বুকে এক খণ্ড বরফ। দেশের সীমানা পেরিয়ে যাদের এই পর্বতচূড়া দেখার সুযোগ মেলে না তারা শীতকালে ছুটে আসেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখতে  অনেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে যান। আবার কেউ কেউ সরাসরি নেপালে যান। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবর শেষে ও নভেম্বর মাসের শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেখা মিলছে। বিগত বছরের তুলানায় আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেক পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। 

কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে তেঁতুলিয়ায় ছুটে আসছেন পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুরা। অনেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য রাত থেকে অপেক্ষা করে বসে থাকেন। পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্সে। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল।

এদিকে শীতের আগেই পরিষ্কারভাবে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় অনেকেই এর সৌন্দর্য ও দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছেন। মূলত মেঘমুক্ত আকাশ থাকায় পর্বতটি দেখা দিয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য নজর কাড়ে পর্যটকদের। এছাড়া তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। যা ছোট বড় সব বয়সী মানুষের নজর কাড়ে। 

স্থানীয়রা জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল। কেউ কেউ নেপাল গিয়েও এই সৌন্দর্য উপভোগ করেন। পঞ্চগড়ের প্রায় সব এলাকার ফাঁকা জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। সবচেয়ে ভালো দেখা যায় তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই সময়ে মেঘমুক্ত ও কুয়াশামুক্ত আকাশের বুকে ভেসে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা। খালি চোখে মেঘমুক্ত আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘার ভেসে ওঠার দৃশ্য উপভোগ করেন অনেকে। 

দর্শনার্থীরা জানান, গত বছর বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শনার্থীরা তেঁতুলিয়ায় কয়েক দিন অপেক্ষা করেও দেখা পাননি কাঞ্চনজঙ্ঘার। তবে এবার সেপ্টেম্বরর শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভেসে ওঠায় তারা এর বাহারি রুপ উপভোগ করছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রতিদিন মহানন্দা নদীর তীরে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোয় ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমীরা।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে দিন দিন পঞ্চগড়ে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকদের আবাসিক সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –