• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

জমে উঠেছে দিনাজপুরের লিচু বাজার

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২২  

দিনাজপুরের লিচু বাগানে থোকায় থোকায় লাল টসটসে লিচু ঝুলছে। দেখলেই জিবে জল এসে যায়। গাছ থেকে ডালসহ লিচু ছিঁড়ে ৫০টি করে আটি তৈরি করা হয়। লিচু গাছের নিচে বসেই নারীরা একত্রে বসে এই লিচুর আটি বাধার কাজটি করে থাকেন।  

লিচু বাগান থেকেই ছোট ছোট যানবাহন ভ্যান বা অটো রিকশা-পিকআপে করে দিনাজপুরের গোড় শহীদ বড় ময়দানের লিচু বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। লিচু বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে জেলার গোর-এ শহীদ ময়দান। 

তবে বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রসালো ও সুস্বাদু এ ফলটি। প্রকারভেদে গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জমে উঠেছে দিনাজপুরের লিচুর বাজার।

সপ্তাহ খানেক ধরে দিনাজপুরের বাজারে মাদ্রাজি ও বেদানা চায়না থ্রি জাতের লিচু উঠতে শুরু করেছে। বাজারে লাল রঙের থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে সবার। দিনাজপুরের রসালো এ লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়েই। তবে সুমিষ্ট স্বাদের বোম্বাই, কাঁঠালি ও হাড়িয়া জাতের লিচু এখনো তেমন বাজারে আসতে শুরু করেনি। 

দিনাজপুরের নিউমার্কেট এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে গত এক সপ্তাহ ধরে লিচুর উপস্থিতি দেখা গেলেও দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে লিচুর বাজার জমে উঠেছে। ভ্যান ও অটো রিকশার ওপর থেকেই লিচু বেচা-কেনা করেন লিচু পাইকাররা। পাশাপাশি খুচরা বাজারে লিচুর বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে বড় ময়দান। দীর্ঘদিন থেকে দিনাজপুর শহরের কোতোয়ালি থানার সামনে নিউমার্কেটে এই লিচুর বাজার বসলেও করোনাকাল থেকে এ বাজার নিয়ে যাওয়া হয় বড় ময়দানে। 

দিনাজপুরে গোর-এ শহীদ ময়দানের লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে বর্তমানে উঠেছে মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু। আমদানিও বেশ ভালো। তবে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার দামও বেশ চড়া। খুচরা বাজারে প্রতিশত মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা দরে। আর বোম্বাই জাতের লিচু প্রতি শত বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা বেদানা জাতের লিচু প্রতি শ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ১৩০০ টাকা, আর চায়না থ্রি  প্রতি শ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত। 

দিনাজপুর ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজিউর রহমান বিল্পব জানান, বাগানেই এবার লিচুর দাম বেশি। বাগান মালিক ও আগাম বাগান কেনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে লিচু। সামান্য ভালোই আমরা লিচু বিক্রি করছি।  

গোর এ শহীদ বড় মাঠের ফল ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ছুটে আসছেন এখানে। প্রতি দিন এই লিচু মার্কেট থেকে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক লিচু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।  

লিচু ক্রেতা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এই লিচু বাজারের প্রথম লিচু পছন্দের তালিকায় ছিল বেদানা লিচু। কিন্তু বেদানা লিচুর দাম অনেক বেশি। বেদানা এক হাজার লিচুর দাম ১২ হাজার টাকা। যা আমার এক মাসের বেতনের সমান। তাই বেদানা লিচু কিনতে পারিনি। মাদ্রাজি জাতের ২ শত লিচু কিনে বাড়িতে ফিরছি। 

লিচু ক্রেতা শাহনাজ মনি বলেন, বেদানা লিচু কিনেছি ১০০ লিচু দাম পড়েছে ১১০০ টাকা একটু বড় সাইজের লিচু ছিল এটা। চায়না থ্রি লিচু পছন্দ হয়েছে কিন্ত দাম চাচ্ছে ১৭০০ টাতা এক লিচুর দামই কিনতে পারিনি।   

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না থ্রি ৭০২ দশমিক ৫ হেক্টর, বেদানা ২৯৪ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ২১ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ রয়েছে সাত লক্ষাধিক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, সারা দেশে কমবেশি লিচু উৎপাদিত হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি।  দিনাজপুরের বেদানা আর চায়না থ্রি জাতের লিচু দেশের আর কোথায় পাওয়া যায়। এই জাতের লিচু শুধুই এখানে চাষ হয়ে থাকে। এবার হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

তিনি আরো জানান, গত বছর দিনাজপুরে ২৮ হাজার মেট্রিক টন লিচুর ফলন হয়েছে; যার বাজারমূল্য ছিল ৫৭৫ কোটি টাকা। দিনাজপুরের লিচু সারা দেশে সুনাম থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ হয় লিচু চাষের জন্যই এই অঞ্চলের মাটি উর্বর আর আবহাওয়া। 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –