• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতিসংঘে বাংলা: সেই ঐতিহাসিক দিন আজ

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য দেশের মর্যাদা লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশ। এর মাত্র সাত দিন পর সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দেন। জাতিসংঘে এটিই ছিল প্রথম বাংলায় ভাষণ। এই বাংলা ভাষণ ছিল সমগ্র বিশ্বের অধিকারবঞ্চিত নির্যাতিত-নিষ্পেষিত মানুষের ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বশান্তি, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।

বিশ্নেষকদের মতে, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণের আরেকটি মূল দিক ছিল, এটি বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার এক কণ্ঠস্বর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ। বিশ্ব পরিসরে বঙ্গবন্ধুর আগে বাংলা ভাষাকে এমন করে কেউ পরিচয়ও করিয়ে দেননি।

ভারতের প্রখ্যাত লেখক ও গ্রন্থ সমালোচক সুরজিৎ দাশগুপ্ত জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার দিনটিকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুন্দরতম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। সৈয়দ বদরুল আহসানের 'শেখ মুজিবুর রহমান :ফ্রম রেবেল টু ফাউন্ডিং ফাদার' গ্রন্থের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সুরজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, জাতিসংঘের দরবারে ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাই সারণি-স্বীকৃত ভাষা। স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলা ভাষার এই গৌরব প্রতিষ্ঠা করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম ওই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে অনুরোধ করা হয়েছিল, ইংরেজিতে বক্তৃতা করার জন্য। কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চান। সিদ্ধান্তটি তিনি আগেই নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলা বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করার গুরুদায়িত্বটি অর্পিত হয়েছিল লন্ডনে বাংলাদেশের তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার ফারুক চৌধুরীর ওপর।

তিনি বলেন, মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেওয়ার বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তটি ছিল তার সমগ্র জীবনের স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক পরিণতি। সেদিন বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে কেবলই মনে হয়েছে, তিনি যেন বহু যুগ ধরে এমন একটি দিনের জন্য অপেক্ষায় থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান স্মরণে ই-পোস্টার প্রকাশ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও জাতির পিতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন। এবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (৭৫তম ) অধিবেশনে ভার্চুয়াল অংশগ্রহণে বাংলায় ভাষণ দেবেন।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –