• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

তাঁকে স্পর্শ করেনি কোনো মোহ

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  

এম নজরুল ইসলাম

মঞ্চে পাদপ্রদীপের আলো যেখানে পড়ে ঠিক তার পাশেই অন্ধকার। সেই অন্ধকারেও এমন কেউ কেউ থাকেন, যাঁদের আলোয় মঞ্চ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সাদা চোখে সে আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। তেমনই একজন মানুষ শেখ রেহানা। আজ ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন। যে পরিবারে তাঁর জন্ম, সেখানে তাঁর ওপরও আলো পড়ার কথা। কিন্তু নিজেকে সে আলো থেকে সযত্নে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। কেন? কারণ তাঁকে স্পর্শ করেনি কোনো মোহ। যেন এক অন্তর্গত মানুষ হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, বড় বোন শেখ হাসিনার রাজনীতিতে যোগদান, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ তো তাঁকেও সমানভাবে আলোড়িত করার কথা। রাজনীতির অন্য রকম টান থাকে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতির পথটিই তিনি বেছে নিতে দ্বিধা করবেন না, এটাই স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু এই সরল সমীকরণটি তিনি বিবেচনায় না এনে বেছে নিলেন আটপৌরে গার্হস্থ্যজীবন। আপাতত এই চিত্রটিই উন্মুক্ত সবার সামনে।

আমরা যদি একটু আলাদা করে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ রেহানার অবদান একেবারে কম তো নয়ই, বরং উপেক্ষা করার মতো নয়। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতৃত্বের নেপথ্যে আরো একজনকে পাওয়া যায়, যাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া সাফল্য লাভ ছিল প্রায় অসম্ভব। শেখ রেহানা তেমনই একজন, যিনি সব সময় বড় বোনের পাশে থেকেছেন, তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন। প্রবাসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সব সময় তাঁকেই পেয়েছে কাণ্ডারি হিসেবে। বড় বোন শেখ হাসিনা এসেছেন রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে। শেখ রেহানা কখনো রাজনীতিতে শামিল হওয়ার কথা ভাবেননি। কিন্তু নেপথ্যে বড় বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, তখন তাঁর দুই সন্তান জয় ও পুতুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শেখ রেহানা।

স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে রাজনীতিবিমুখ ভাবার কোনো অবকাশও কিন্তু নেই। রাজনীতি যাঁর রন্ধ্রে তাঁকে কি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে রাখা যায়! তিনি নেপথ্যের একজন হয়ে গেলেন, প্রকাশ্যে না এসেও সম্পৃক্ত হলেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। তিনিই তো প্রথম মানুষ, যিনি প্রবাসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছিলেন ১৯৭৯ সালের ১০ মে। দেশের প্রয়োজনে সব সময় তিনি পাশে থেকেছেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি প্রবাসী নেতৃত্বের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও আমরা জানি, সব সময় আছেন বড় বোনের পাশে, ছায়ার মতো।

অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল তাঁর জীবন। জাতির জনকের কন্যা তিনি। রাজনীতির চড়াই-উতরাই দেখেছেন খুব কাছ থেকে। জীবনের শুরু থেকেই বলতে গেলে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। এসব সময়ে তাঁর পরিবারকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। শেখ রেহানা খুব কাছ থেকে দেখেছেন কিভাবে তাঁর মা ফজিলাতুন নেছা মুজিব একা সামলেছেন সব ঝড়ঝাপ্টা। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের শীর্ষ নেতার পরিবারটিও আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই ছিল। সেখানে মনের দৈন্য ছিল না; বরং আড়াল থেকে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার শিক্ষা তিনি পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বান্ধব পরবাসে নিজেদের মতো করে জীবনযাপনের অভিজ্ঞতাও তাঁকে ঋদ্ধ করেছে। অভ্যস্ত করেছে পরিমিত জীবনাচারে। কৈশোর-উত্তীর্ণ বয়সেই অনুভব করতে হয়েছে শূন্যতা। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে কাউকে তা বুঝতে দেননি; বরং বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খুঁজে ফিরেছেন আত্মার আত্মীয়দের।

প্রকৃতিই বোধ করি তাঁকে আদর্শ এক মানুষে পরিণত করেছে। জীবনের যে সময়ে উচ্ছলতায় ভেসে যাওয়ার কথা, তখনই পেয়েছেন সবচেয়ে বড় আঘাত। এর পর থেকেই তো শুরু হয়েছে জীবনসংগ্রাম। কষ্ট হয়েছে, কিন্তু সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তাঁরা সবাই আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

জগৎ সংসারে এমন কিছু মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা নিজেদের নিয়ে কখনো উদগ্রীব হননি। আবার পাদপ্রদীপের আলোয় কখনো নিজেদের আলোকিত করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আড়াল করে রেখেছেন সব কিছু থেকে। এমন নির্মোহ থাকা সবার জন্য সম্ভব হয় না, বিশেষ করে রাজনৈতিক আবহে যাঁদের বেড়ে ওঠা, তাঁদের পক্ষে নিভৃত জীবন কাটানো একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হয়। তবে নিতান্ত সাদামাটা জীবনে যাঁরা অভ্যস্ত, ক্ষমতা তাঁদের মোহভঙ্গের কারণ হতে পারে না কখনো। এমনই এক আড়ালচারী মানুষ শেখ রেহানা।

জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই তাঁকে। শুভ জন্মদিন।

লেখক : সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়াপ্রবাসী লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক
[email protected] 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –