• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় যা হতে পারে

প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৩  

তুরস্কের বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেউ প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় এটি এখন দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়িয়েছে।

প্রথম রাউন্ডের ফলাফলে তুরস্কের ‘লৌহমানব’ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান (৬৯) এগিয়ে থাকলেও বিজয়রেখা অতিক্রম করতে পারেননি। মাত্র .৪৯% ভোটের দূরত্ব ছুঁতে পর্যন্ত পারেননি নির্বাচন কমিশনের ৫০% সীমানার ‘বিজয়রেখা’।

একই দশা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ‘তুরস্কের গান্ধী’ কামাল কিলিচদারোগ্লুরও (৭৪)। ভোটের দৌড়ে ৪৪.৮৯ শতাংশে এসেই দম ফুরিয়ে গেছে। দু’জনই এখন তৈরি হচ্ছেন দ্বিতীয় দফার দৌড়ে। তবে এবারের নির্বাচনি দৌড়ে একটা বড় ভিন্নতা চোখে পড়ছে দুই প্রার্থীর দৌড়েই। প্রথম দফার মতো দুজনের কেউই আর নিজেদের ভোট ব্যাংকের ওপর আস্থা নিয়ে মাঠে নামছেন না।

প্রথম রাউন্ডের ফলাফলে তৃতীয় অবস্থানে থাকা এটিএ জোটের প্রার্থী সিনান ওগানের (৫৬) হাতেই এখন ‘দুজনের ভাগ্য’। কারণ প্রথম দফার দৌড়ে তার হাতে এসেছে ৫.১৭ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফাতে এমন-তেমন হলে সিনানই হবেন ‘কিং মেকার’। অভিবাসীবিদ্বেষী এই নেতা যার হাত ধরবেন তিনিই হবেন প্রেসিডেন্ট।

দেশটির সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল (ওয়াইএসকে) সোমবার ঘোষণা করেছে, রোববারের প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচনে সব ব্যালট বাক্স খোলা হয়েছে (যদিও এখন পর্যন্ত অল্পসংখ্যক বিদেশি ব্যালটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি)। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান ৪৯.৫১% ভোট পেয়েছে এবং নিকটতম বিরোধী জোটের প্রার্থী কিলিচদারোগ্লু ৪৪.৮৯% ভোট পেয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হতে হলে ৫০% এর বেশি ভোট পেতে হবে। কোনো প্রার্থীই তা নিশ্চিত করতে না পারায় ২৮ মে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনের জন্য নির্ধারণ করেছে।

নির্বাচনের ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে, এরদোগান আনাতোলিয়ান প্রদেশগুলোর কেন্দ স্থলে তার সমর্থনের ভিত্তি বজায় রেখেছিলেন; যদিও তিনি দক্ষিণ-পূর্বে কিছুটা সমর্থন হারিয়েছেন। এ ছাড়াও বড় শহরগুলোতেও তার অবস্থান আগের মতোই ছিল।

তবে সবকিছু কাটিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভূমিকম্পকবলিত অঞ্চলগুলোতে তার অবস্থান চোখে পড়ার মতো। তবুও, মেগাসিটিতে প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় ভোটের ফলাফলে বিরোধীদের বেশি সমর্থন পরিলক্ষিত হয়েছে। ইস্তাম্বুলে কিলিচদারোগ্লু ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যেখানে এরদোগান ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এমনকি আংকারাতে কিলিচদারোগ্লু ৪৭%, আর এরদোগান ৪৬% ভোট পেয়েছে। যা দেখে এটা স্পষ্ট যে, এরদোগানবিরোধীরা আঙ্কারায়ও তাদের বিজয় নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়াও, ইজমির, তুরস্কের আরেকটি মেগাসিটি, যা সবসময়ে সিএইচপির শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল, এবারের নির্বাচনে এরদোগান এর কিছু এলাকায় একটু বেশি ভোট পেয়েছেন। সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে কুর্দিদের কামাল কিলিচদারোগ্লুকে সমর্থন করা।

ঐতিহাসিকভাবে তুর্কির কুর্দিরা সিএইচপির রাজনীতি পছন্দ করে না কিন্তু এবারের নির্বাচনে এই (কুর্দি) অঞ্চলে কিলিচদারোগ্লুর পক্ষে প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে। যদিও, কিলিচদারোগ্লুর দল সিএইচপি এখান থেকে সংসদে খুব বেশি আসন পায়নি। কারণ কুর্দিপন্থি রাজনৈতিক দল, এইচডিপির সাথে এভাবেই চুক্তি হয়েছিল।

সংসদীয় আসনগুলোতে, ক্ষমতাসীন একে পার্টি পার্লামেন্টে সর্বাধিক আসন অর্জন করেছে, যদিও ২০১৮ এর নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে তুলুনা করলে বাস্তবে তারা বেশ কয়েকটি আসন হারিয়েছে এবং তাদের ভোটার সংখ্যাও পূর্বের থেকে কমেছে। তা সত্ত্বেও এরদোগানের জোট এখনো ৬০০ আসনের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৩২২ আসন) অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সংসদে একে পার্টির আসন সংখ্যা ২৯৬ থেকে কমে ২৬৬ হয়েছে। অন্য দিকে সিএইচপি (তাদের জোটের সাথে) ১৬৬টি আসন জিতেছে, যদিও তারা একা এই আসনগুলো পায়নি।

এবারের প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচন মূলত এরদোগান আর কিলিচদারোগ্লুর মাঝে পাঁচ মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন, মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রতিরক্ষা নীতি ও কুর্দি সমস্যার মতো চারটি কারণের ওপর নির্ভর করে বিভক্ত করা হয়েছিল। তবে এটা স্পষ্ট যে, বেশির ভাগ তুরস্কের জনগণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যা হোক না কেন এরদোগানকেই সমর্থন করছে। আর তার অন্যতম কারণ হলো এরদোগানের প্রতিরক্ষানীতি। আর এজন্যই সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলে শরণার্থী সমস্যা, অর্থনৈতিক মুদ্রাস্ফীতি এবং নিরাপত্তা সমস্যার সমাধানে, মানুষ বিরোধী জোটের চেয়েও তাকে বিশ্বাস করে।

প্রকৃতপক্ষে, যে স্লোগানটি বিরোধী জোটকে একত্রিত করেছিল-অধিকার, আইন, বিচার (হাক, হুকুক, আদালত), তা মাঠে খুব বেশি একটা কার্যকর হয়নি। কারণ বিরোধী জোটের একটা বিশাল অংশই তাদের মূল উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি আর তাদের বার্তাও মানুষের কাছে স্পষ্ট ছিল না। এরদোগানের জোট নিজেদের বিজয়ী হিসাবে দেখছে। তাদের বর্ণনায়, সাতটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের গড়ে ওঠা কৌশল স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে।

যার অন্যতম কারণ হিসাবে তারা বিরোধী দলের কুর্দিপন্থি রাজনৈতিক দল, এইচডিপির সাথে জোটকে দেখাচ্ছে। সাধারণত, তুরস্কের কট্টর জাতীয়তাবাদীরা এমন কোনো রাজনৈতিক দল দেখতে চায় না যারা এইচডিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতি করে। এ ছাড়াও, মুহাররেম ইঞ্জের ভোটাররাও বিরোধী দলের তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকে দমন করার পথ হিসাবে এরদোগান আর তার রাজনৈতিক জোটের পক্ষে ভোট দিয়ে থাকতে পারে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক বিশ্লেষকেই মুহাররেম ইঞ্জে আর মেরাল আকসেনারের কথাকে সামনে এনে এটাই বলছে যে, কামাল কিলিচদারোগ্লু তাদের জন্য সঠিক ব্যক্তি ছিলেন না। কারণ তিনি গত ২০ বছরে এরদোগানের বিরুদ্ধে কখনো নির্বাচনে জয়ী হননি। যার মূল কারণ ছিল তার পলিসিগত দুর্বলতা আর ১৯৯৯ সালে তুরস্কের সামাজিক নিরাপত্তা ইনস্টিটিউশনের (এসএসকে) সংকটের সময় তার ব্যর্থ ভূমিকা। যদিও নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তবে তুরস্কের রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে যা মনে হচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে এরদোগানই জয়ী হবেন কারণ তার প্রয়োজন মাত্র ০.৫%।

যেখানে কিলিচদারোগ্লুর প্রয়োজন ৫% ভোট। আরেকটা বিষয় স্পষ্ট যে, ডানপন্থি, ধর্মীয় এবং রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলগুলোর জোট (তেমেল কারামোল্লাওলু, আহমেত দাউতওলু এবং আলী বাবাজান) প্রধান বিরোধী দল-সিএইচপিতে কৌশলগত ছাড়া ভোটের রাজনীতিতে খুব বেশি অবদান রাখতে পারেনি।

ধারণা করা হয়েছিল, ইস্তাম্বুলের মেয়র, একরেম ইমামওলু আর আংকারার মেয়র, মনসুর ইয়াভাসের জনপ্রিয়তা ব্যালট বাক্সে অনেক বড় রকমের প্রভাব ফেলবে। বাস্তবে আংকারা আর ইস্তাম্বুলের বাইরে, আনাতোলিয়া অঞ্চলে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি এবং তাদের সামাজিক মিডিয়ার প্রভাব খুব বেশি একটা কার্যকর হয়নি। এ কারণেই সিনান ওগানের ৫ শতাংশ ভোটের হিসাব তাদের দ্বিতীয় রাউন্ড নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ওগানই এখন তুরস্কের রাজনৈতিক ‘গেম চেঞ্জার’। তার প্রভাব মূলত তরুণদের ওপর। যা হোক তিনি কার সাথে দরকষাকষি করবেন তা স্পষ্ট নয়, তবে জনমত জরিপে যা বুঝা যাচ্ছে তাতে খুব সম্ভবত তার ভোটাররা কট্টর জাতীয়তাবাদী হওয়ায় এরদোগানের দিকেই ঝুঁকতে পারেন তিনি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –