• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

দিনাজপুরে ব্যতিক্রম আয়োজনে বট-পাকুড়ের বিয়ে

প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০২২  

গায়ে হলুদ, বাদ্য-বাজনা, উলুধ্বনি, রান্না ও পাঁচ হাজার অতিথি আপ্যায়নসহ হিন্দু শাস্ত্রমতে সব আয়োজনই ছিল এই বিয়েতে। তবে,দিনব্যাপী এই বিয়ের বর-কনে ছিল বট-পাকুর গাছ।

বুধবার সন্ধ্যায় মহাধুমধামে বৃক্ষের এমন ব্যতিক্রম বিয়ে হয়ে গেল দিনাজপুর কাহারোল উপজেলায়। সুন্দরপুর ইউনিয়নের গড়নুরপুর গ্রামে ভদ্রকালী মন্দিরের সামনে এই জমজমাট এ বিয়ের আয়োজনে মন্দির প্রাঙ্গণ ছিল ভক্ত-পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা।

এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করেন গরনুরপুর, পরমেশপুর, নথাবাড়ী, ইটুয়া, বয়াইল পাতমা ও ইসানপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তারা নিজেরাই চাঁদা তুলে যুগিয়েছেন বিয়ের খরচ।

বিয়েতে কনে শ্রীমতি বটেশ্বরীর বাবা হিসেবে কন্যাদান করেছেন ইটুয়া নৌধনবাড়ী গ্রামের রমেশ্বর রায় ও মাতা আরতী রানী রায় আর ছেলে শ্রীমান পাকুড়ের বাবা মা গড়নুরপুর গ্রামের কমলা কান্ত রায় ও মেনকা রানী রায় দম্পতি গোধূলি লগ্নে বিয়ে হলেও দুপুরে এ বিয়ে ঘিরে এলাকায় দেখা দিয়েছিল উৎসব। আর তাই,দুপুরের আগেই মন্দির প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে মানুষের পদচারণায়।

অনেকেই জানিয়েছেন, বট ও পাকুড়ের বিয়ে মানেই মঙ্গল আগমন। অতি আগ্রহে এবং মঙ্গল কামনায় বিয়েতে এসেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিয়ে ঘিরে বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানো হয়। টাঙানো হয়েছিল সামিয়ানা। লাগানো হয় দৃষ্টিনন্দন লাইট। বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয় চারপাশ। হিন্দুজানো ছিল বিয়ের আসর। পাশেই ব্যস্ত রাঁধুনিরা।

পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এরপরে হিন্দু শাস্ত্র মতে পালন করা হয় বিয়ের আচার। একে একে হয় গ্রামপূজা, গায়ে হলুদ, নান্দিমুখসহ সব অনুষ্ঠান। এরপর দুপুরে ভক্ত-পুণ্যার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয় প্রসাদ (আপ্যায়ন)। দুপুর ১২টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

সাধারণ বিয়ের মতোই বরকে ধুতি-পাঞ্জাবি ও কনেকে পরিয়ে দেওয়া হয় শাড়ি। পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বট-পাকুড়ের বিয়ে।

বিয়ের পুরোহিত ছিলেন গনেশ চক্রবর্তী ও তার সহযোগীরা। তিনি বলেন, সনাতন ধর্ম মতে দেশাচার, কুলাচার ও বেদাচার মেনে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলে এলাকার লোকজনের মঙ্গল হয়। শুধু তাই নয়, পবিত্র গীতাতেও বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। আগে থেকেই এ ধরনের বিয়ের প্রচলন হয়ে আসছে। তাই এমন বিয়েতে থাকতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।

স্থানীয়রা জানান, মন্দির প্রাঙ্গণে তিন-চার বছর আগে পাশাপাশি গাছ দু'টি লাগানো হয়েছিল। হিন্দু শাস্ত্রমতে পাশাপাশি বট-পাকুড় গাছ থাকলে ফল আসার আগেই তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই বিয়ের আয়োজন।

বিয়ে দেখতে আসা, এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ভবেশ শাহা, কমলা কান্ত, বিনতি রানী জানান, এ ধরনের বিয়ের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু কখনোই দেখা হয়নি। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে বিয়ে দেখতে আসি।

আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের বিষয়ে মন্দির কমিটির সভাপতি বিশাল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মৃনাল কান্তি রায় বলেন, গ্রামের সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে এ বিয়ের আয়োজন করেছে। ছয় গ্রামের লোকজন মিলে এমন আয়োজন করায় আমরা বেশ খুশি। বিয়েতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়েছে। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানো হয় সবজিঘণ্ট আর পায়েস। সঙ্গে ছিল জলপাইয়ের আচার। মূলত রীতি চরিতার্থ করার স্বার্থেই এ আয়োজন। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে এটাই আমাদের কামনা।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –