• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

দিনাজপুরে সন্ধান পাওয়া গেছে পতঙ্গভুক ‘সূর্যশিশির’

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

দিনাজপুরে আবারও ‘সূর্যশিশির’ উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রতঙ্গভুক এই উদ্ভিদ দেখার জন্য বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ উত্সুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে। বাংলায় বলা হয় সূর্যশিশির-(মাংসাশী উদ্ভিদ), যার আরেক নাম মুখাজালি। জন্মায় অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায়।

১৫ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে সংরক্ষিত পুকুরপাড়ের পশ্চিম পাড়ে বিলুপ্তপ্রায় প্রতঙ্গভুক ‘সূর্যশিশির’ নামে এই উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদ প্রজাতিটির শনাক্ত করেন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। গত বছর এখানে তিনটি গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু এবার ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে একই স্থানে শত শত পতঙ্গভুক ‘সূর্যশিশির’ দেখা গেছে।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, উদ্ভিদটি সংরক্ষণ ও বিস্তারের জন্য গবেষণা প্রয়োজন। তিনি জানান, গোলাকার সবুজ থেকে লালচে রঙের থ্যালাসের মতো মাটিতে লেপ্টে থাকা উদ্ভিদটি মাংসাশী উদ্ভিদসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি। এই উদ্ভিদটির রয়েছে ঔষধিগুণ, পোকামাকড়, কীটপ্রতঙ্গ খেলেও উপকারি পোকা বা কীটপ্রতঙ্গ এই উদ্ভিদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এ কারণে উপকারী পোকা বা কীটপ্রতঙ্গের ক্ষতি করতে পারে না। এরা জন্মায় অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায়। যে মাটিতে সূর্যশিশির জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে। যা মরুকরণের দিকে ইঙ্গিত বহন করে।

সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরো জানান, চার-পাঁচ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাসদৃশ উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের দুই-তিন ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জুরি হয়। সংখ্যায় ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতাসদৃশ মাংসাল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাটা থাকে। মাংসাল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু। পাতাগুলোয় মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক এক প্রকার এনজাইম নির্গত করে। এনজাইমে পোকা পড়লে আঠার মতো আটকে রাখে। শীতের সকালে পড়া শিশিরে চকচক করে উদ্ভিদটি, তাতেও পোকারা আকৃষ্ট হয়। পোকামাকড় উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায়।

তিনি জানান, কয়েক মাস থেকে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা উদ্ভিদটির সংরক্ষণ এবং বিস্তারে তাদের গবেষণা চালাচ্ছে। সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরো জানান, উদ্ভিদটি এবারই প্রথম নয়, প্রথম ক্যাম্পাসে শনাক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। তত্কালীন বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ রজব আলী মোল্লা এটি শনাক্ত করেন।

দিনাজপুরের মাটিতে অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়ার নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মামুন আল আহসান চৌধুরী। তিনি জানান, মাটির পুষ্টিগুণ উর্বরতা ঠিক থাকার জন্য যে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে ৯টি উপাদানের ঘাটতি আছে দিনাজপুরের মাটিতে। ফলে অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে দিনাজপুর জেলা মরুকরণের দিকে খুব আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাসে উদ্ভিদটি দেখার জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ উত্সুক জনতা এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। এদের বংশ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা চলমান রেখেছে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও, ঢাকা এর জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে প্রদর্শিত উদ্ভিদটির প্রতিকৃতিতে দেওয়া তথ্যমতে, বিলুপ্ত প্রায় এই উদ্ভিদটি বাংলাদেশে শুধু দিনাজপুর, রংপুর, ঢাকা জেলায় পাওয়া যায়।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –