• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দিনাজপুরে স্কোয়াস চাষে আগ্রহ বাড়ছে

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২১  

দিনাজপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যের জনপ্রিয় ফসল স্কোয়াশ। স্বল্প সময়ের মধ্যে বাজার জাত করা যায় বলে বেকার শিক্ষক ও অর্ধ শিক্ষিত যুবকরা এই স্কোয়াশ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। জেলার চিরিরবন্দর ও নবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে স্কোয়াস চাষের সফলতা পাওয়ায় অনেকেই স্কোয়াস চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। 

জেলার চিরিরবন্দরে প্রথমবার স্কোয়াস চাষে বাজিমাত করেছেন তরুণ চাষি মাহফুজুর। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে স্কোয়াশ চাষ করেছেন মাহফুজুর রহমান। বিদেশি সবজি স্কোয়াশ ও ক্যাপসিকাম পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করতে গিয়ে সফলতা পেয়েছেন।

ইন্টারনেট আর ইউটিউবে স্কোয়াস চাষের পদ্ধতি দেখার পর নিজ গ্রামের জমিতে বিদেশি এই সবজির ফলন কেমন হয় তা দেখতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছিলেন মাহফুজুর রহমান। ভালো ফলন হওয়ায় বিদেশি সবজি চাষের আগ্রহ বেড়েছে তার। মাত্র তিন মাসেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। স্কোয়াশ বিক্রি করে ভালো লাভ পাওয়ায় আরো বড় পরিসরে স্কোয়াশ চাষ করবেন বলে মনস্থির করেছেন।

মাহফুজুর রহমান দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের পূর্ব মালুপাড়ার মোকছেদ আলীর ছেলে। তার বাবাও একজন সফল কৃষক। তিনি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের অনার্সের শিক্ষার্থী। কৃষির প্রতি প্রবল ঝোঁক থেকেই ইন্টারনেট আর ইউটিউব দেখে সবজি নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।

মাহফুজুর রহমান জানান, দিনাজপুর শহর থেকে বীজ সংগ্রহ করে তার বাবার মাত্র ৬ শতক জমিতে স্কোয়াশ এবং ২ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। চাষ শুরুর তিন মাসেই তার ক্ষেতে স্কোয়াশের ব্যাপক ফলন আসে। পাশাপাশি রোপিত ক্যাপসিকামের গাছেও ফুল আসে। চাষাবাদে উপযুক্ত প্রচুর জমি আছে এ অঞ্চলে।

তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে স্কোয়াশ চাষে তার আশাতীত ফলন এসেছে। এরমধ্যে স্থানীয় পাইকারি বাজারে ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে প্রতি স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। জমি থেকে সপ্তাহে দুই-তিনবার করে স্কোয়াশ তোলা যায়। প্রতিবারই কমপক্ষে ১০০টি করে স্কোয়াশ তোলা যায়। এ জমিতে চাষের শুরু থেকে ফলন আসা পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। এ পর্যন্ত তিনি ১০ হাজার টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। 

মাহফুজুর রহমান জানান, অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর স্কোয়াশ দেখতে অনেকটা শসা ও মিষ্টি কুমড়া আকৃতির। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগী। এছাড়া এটি সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। স্কোয়াশ শীতকালীন সবজি হলেও এখন গাছে ফুল আসছে। 

একই গ্রামের তরুণ চাষি ইকবাল হোসেন জানান, আমিও ইউটিউবে স্কোয়াস চাষের পদ্ধতি দেখেছি আর বাস্তবে দেখলাম মাহফুজুর ভাইয়ের স্কোয়াস চাষ। আমার ধারণা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। স্বল্প পুঁজি দিয়েই স্কোয়াস চাষে সফলতা পাওয়া যাবে। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে বেকারদের স্কোয়াস চাষ শুরু করা দরকার। 

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, স্কোয়াশ সবজি জাতীয় ফসল, যা কুমড়া ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের ক্রস। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন উৎপাদন ক্ষমতা নেই। স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি। পাশাপাশি অনেক তরুণ চাষিরা এখন ইন্টারনেট ও ইউটিউব ব্যবহার করে আধুনিক কৃষির সঙ্গে জড়িত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের নির্দেশনায় আমরা বিনামূল্যে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি। অল্প খরচে কিভাবে বেশি ফলন ঘরে তোলা যায় সে ব্যাপারেও আমরা কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে চলেছি। 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –