দেবী দুর্গা ও তাঁর পূজা
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১
নিরঞ্জন অধিকারী
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বহু দেব-দেবীর পূজা করে থাকে। এ থেকে মনে হতে পারে, হিন্দুরা বহু-ঈশ্বরবাদী। এ ধারণা ভুল। প্রকৃতপক্ষে হিন্দুরা একেশ্বরবাদী। বেদে বলা হয়েছে, ‘একং সদ্ বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি’। ‘সৎ’ বা চিরন্তন শক্তি, অর্থাৎ ঈশ্বর এক, কিন্তু বিপ্র অর্থাৎ জ্ঞানী ব্রাহ্মণরা সেই এককেই বহু রূপে বিবেচনা করেন। হিন্দুদের এক শ্রেণির ধর্মগ্রন্থের নাম ‘উপনিষদ’। একটি উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ (সেই ঈশ্বর) এক, তিনি অদ্বিতীয়। তাহলে হিন্দুরা যে বহু দেব-দেবীর পূজা-উপাসনা করে, তাঁরা কারা? কী তাঁদের পরিচয়? আর তাঁদের পূজা বা উপাসনা কেন করা হয়? আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখতে চাই, সনাতন ধর্ম একেশ্বরবাদী, না বহু-ঈশ্বরবাদী।
উপনিষদের মর্মানুসারে সনাতন ধর্ম একেশ্বরবাদী। সেখানে জীব ও জগতের সব কিছুর উৎসকে বা স্রষ্টাকে বলা হয়েছে ‘ব্রহ্ম’। এই ব্রহ্মের দুটি অবস্থা। একটি নির্গুণ, অন্যটি সগুণ। নির্গুণ ব্রহ্ম নিষ্ক্রিয়। কিন্তু সগুণ ব্রহ্ম সক্রিয়। অর্থাৎ ব্রহ্মের যখন সগুণ অবস্থা, তখন তিনি সৃষ্টি করেন। তিনি শুধু সৃষ্টিই করেন না, তিনি পালন করেন এবং ধ্বংস করেন। তবে একে ধ্বংস না বলে বলা উচিত ‘লয়’। এখানে লয় মানে ভারসাম্য রক্ষা করা। সগুণ ব্রহ্ম যখন সৃষ্টি করেন, তখন তার অভিধা হয় ব্রহ্মা। ব্রহ্মারূপে তিনি সৃষ্টি করেন। আবার সেই ব্রহ্মই বিষ্ণুরূপে পালন করেন। আর ‘শিব’ বা মহাদেবরূপে তিনি ধ্বংস করে ‘লয়’ বা ভারসাম্য রক্ষা করেন। সৃষ্টি-স্থিতি-লয় নিয়েই এই ‘সংসার’। নিরাকার ব্রহ্ম যখন সগুণ হয়ে জীব ও জগতের ওপর প্রভুত্ব করেন তখন তাঁকে বলা হয় ঈশ্বর। ঈশ্বর শব্দটির অর্থ প্রভু। ঈশ্ ধাতুটির অর্থ হচ্ছে প্রভুত্ব করা। নির্গুণ ব্রহ্ম সগুণ হয়ে জীব ও জগতের ওপর প্রভুত্ব করেন বলেই তিনি ঈশ্বর। এই প্রভুত্ব হচ্ছে জন্ম, পালন, জ্বরা, মৃত্যু প্রভৃতির কর্তা। এসব কিছুর নিয়ন্তা তিনি। ব্রহ্ম ঈশ্বররূপে যখন জীবকে কৃপা করেন, তখন তাকে বলা হয় ভগবান। ব্রহ্মই অবস্থাভেদে ঈশ্বর ও ভগবান।
আবার সগুণ ব্রহ্মের কোনো গুণ ও শক্তি বা ক্ষমতা যখন আকার পায়, তখন তাকে বলা হয় ‘দেব’ বা ‘দেবী’, এককথায় ‘দেবতা’।
আদ্যাশক্তি মহামায়া নানা যুগে নানা রূপে আবির্ভূত হয়ে দুষ্টের দমন করে শিষ্টের জীবনে ও জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
পুরাকালে একসময়ে অসুরকুলজাত এবং অসুরদের রাজা মহিষাসুর প্রবল প্রতাপান্বিত হয়ে উঠেছিলেন। এই প্রতাপের পেছনে তাঁর নিজের শক্তি তো ছিলই, তার ওপর তিনি ব্রহ্মাদেবের কাছ থেকে বর পেয়ে আরো প্রতাপান্বিত হয়ে উঠেছিলেন।
এখানে একটি কথা বলা দরকার। মানুষ-দৈত্য-দানব যে-ই হোক না কেন, সাধনার দ্বারা সন্তুষ্ট করতে পারলে দেবতারা বর প্রদান অর্থাৎ উপাসকের ইচ্ছা পূরণ করেন। এটা একটা নৈতিক নিয়ম। দেবতারাও এ নিয়মের বাইরে নন।
মহিষাসুর কঠোর সাধনা করে ব্রহ্মাদেবকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। ব্রহ্মাদেব তাঁর কঠোর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে বর দিতে এলেন। মহিষাসুর তাঁর কাছে অমর বর চাইলেন। ব্রহ্মা মহিষাসুরকে অমরত্ব ছাড়া অন্য কোনো বর চাইতে বললেন। মহিষাসুর তখন চালাকি করে এই বর চাইলেন—কোনো পুরুষ যেন তাঁকে হত্যা করতে না পারে। ব্রহ্মা বললেন, ‘তথাস্তু’। অতঃপর মহিষাসুর পাতাল, মর্ত্য ও দেবতাদের স্বর্গরাজ্যের অধীশ্বর হয়ে বসলেন। হয়ে উঠলেন একজন অত্যাচারী শাসক।
দেবরাজ ইন্দ্র তখন অন্যান্য দেবসহ পৃথিবীর বনে বনে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন এবং হৃত স্বর্গরাজ্য ও ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার উপায় খুঁজতে লাগলেন। তখন তাঁরা ব্রহ্মাকে অগ্রবর্তী করে গেলেন মহাদেব বা শিবের কাছে। শিব তখন সবাইকে নিয়ে বিষ্ণুদেবের কাছে গেলেন। বিষ্ণুদেব দেবরাজ ইন্দ্রসহ উপস্থিত দেবগণকে ভর্ত্সনা করলেন। সেই সঙ্গে উত্তেজিত করলেন। উত্তেজিত দেবতাদের তেজ থেকে তৈরি হলো এক আলোকপুঞ্জ। সেই আলোকপুঞ্জ বা জ্যোতি রূপ নিল এক তেজোদীপ্ত দেবীতে। তিনি দশভুজা। জটাজুটসমাযুক্ত। অতসী ফুলের মতো হলদে-ফরসা তিনি। এ দেবীর নাম দুর্গা। দুর্গতি থেকে ত্রাণ করেন বলেই তাঁর নাম দুর্গা। মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন বলে তাঁর আরেক নাম মহিষমর্দিনী। বাঙালি হিন্দুরা এই মহিষমর্দিনী দেবী দুর্গার পূজা করে থাকেন। দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। সিংহকে তিনি বশ করে বাহন করেছেন। তাই তাঁর আরেক নাম সিংহ বাহিনী। এই সিংহ অবশ্য নারীর ভেতরে যে প্রবল শক্তি রয়েছে, তারই প্রমূর্ত প্রকাশ।
যুদ্ধরত দুর্গা তাঁর ডান পা সিংহের ওপর, বাঁ পা উপবিষ্ট মহিষাসুরের কাঁধে—এ অবস্থায় তিনি মহিষাসুরের বক্ষে ত্রিশূল বিদ্ধ করেছেন।
দুর্গাপূজা বছরের দুটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। একটি শরৎকালে, আরেকটি বসন্তকালে। বসন্তকালের দুর্গাপূজাকে বলা হয় বাসন্তীপূজা। আর শরৎকালের দুর্গাপূজাকে বলা হয় শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গাপূজাই অধিকতর আড়ম্বরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। শরৎকালে নীল আকাশে দেখা সাদা মেঘের ভেলা। ফসল ওঠার পর কৃষিজীবনে তখন অবসর। তখন দুর্গাপূজায় ভক্তরা উৎসবে মেতে ওঠে। তাই দুর্গাপূজা শুধু পূজা নয়, উৎসব। পূজা করে হিন্দু ভক্তরা। কিন্তু উৎসবে বাংলাদেশের অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষও আমন্ত্রিত হয়, আপ্যায়িত হয়। উপভোগ করে দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত সংগীত-নৃত্য-নাট্যাদি অনুষ্ঠান। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আরতি-নৃত্যও একটি উপভোগ্য বিষয়। এই পূজা উপলক্ষে মেলা বসে। সেই মেলায়ও অংশ নেয় হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ। সে-ও এক মিলনমেলা। বুকের সঙ্গে বুক, প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মেলানোর এক মহা উৎসবে পরিণত হয় দুর্গাপূজা। হয়ে ওঠে বাঙালির আনন্দ ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- বীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- ফুলবাড়ীতে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ আদায়
- গাইবান্ধায় যুব উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ নিয়ে মতবিনিময় সভা
- দিনাজপুরে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়
- রংপুরে ইসতিসকার নামাজ আদায়
- দ্বিতীয় সাক্ষাতেও গুজরাটকে হারাল দিল্লি
- খুন হওয়ার ভয়ে বাড়ি ছাড়লেন সালমান খান
- সব রোগ-ব্যাধি থেকে শেফা লাভের সূরা
- জিম্মি এক ইসরায়েলি-আমেরিকানের ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস
- কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
- র্যাবের নতুন মুখপাত্র আরাফাত ইসলাম
- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন
- গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ
- মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক
- এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- সব ডিসি-এসপির সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ
- হিট অ্যালার্ট আরো তিনদিন বাড়লো
- বিআরটিএর অভিযানে ৪০৪ মামলায় ৯ লাখ টাকা জরিমানা
- ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
- গুচ্ছের হাবিপ্রবি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ১২৩৪১ জন
- ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- গ্রীষ্মকালে শীতল ত্বক
- ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী
- মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশি
- হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪ নির্দেশনা
- চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
- উপজেলা নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েন করা হবে
- পুলিশের প্রতি ১১ নির্দেশনা
- প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৬ প্রার্থী
- সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী
- দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট
- দিল্লী হাইকমিশনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত
- ৬ শতাধিক পটল গাছ উপড়ে ফেলল দুর্বৃত্তরা, দিশেহারা কৃষক
- চুমু খেতে চাওয়া সেই পীরজাদা হারুনকে দলে নিলেন নিপুণ!
- ঈদে পার্বতীপুর- জয়দেবপুর রুটে চলবে ৩টি বিশেষ ট্রেন
- আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরো সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
- ইস্তিসকার নামাজের সময় ও বিধি-বিধান
- ঈদের দিন বন্ধ থাকবে আন্তঃনগর ট্রেন
- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতা বাড়ছে
- বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি
- বুয়েটে অপরাজনীতি হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী
- ‘ডানপন্থী রাজনৈতিক দল নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না’
- গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
- পরীক্ষামূলক জিরা চাষে কৃষকের বাজিমাত
- টানা ৬ দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু
- আইপিএলের মাঝপথে হঠাৎ দেশে ফিরলেন মুস্তাফিজ
- দিনাজপুরে হলিল্যান্ড কলেজে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের ৫০০ বৃক্ষের চারা বিতরণ-রোপণ
- রাইমা সেন কেনো হুমকি!