• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

নতুন রূপে সেজেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৩  

তীব্র খরতাপ! মাঝেমধ্যে বৈশাখের শীতল বাতাস। পাকা আম-কাঁঠালের সুবাস। প্রকৃতিতে চলছে ভরা গ্রীষ্ম। বৃষ্টির খবর নেই। খরতাপে পুড়ে ছারখার পথ-ঘাট। একটু স্বস্তি আর বাতাসের খোঁজে গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। এমন সময়ে রক্তঝরা কৃষ্ণচূড়া আর রংধনুর মতো হরেক রঙে প্রকৃতিতে এসেছে নানা গোত্রের ফুলেরা।

ষড়ঋতুর বাংলার প্রকৃতি যেন নির্দয়। শীত-বসন্ত পেরিয়ে ষড়ঋতুর বাংলায় এসেছে ফুল-ফলের ঋতু গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মের আগমনে প্রকৃতিতে সেজেছে নানান ফুলে-ফলে। হলুদ আভার সোনালু আর বেগুনি জারুলের সঙ্গে এসেছে রক্তিম লাল কৃষ্ণচূড়া। 

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির সম্মুখ অংশে, জিরো পয়েন্ট থেকে ফ্যাকাল্টি রোডে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। ক্যাম্পাসে এমন সাজ যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। মুগ্ধতা ছড়াবে প্রকৃতি প্রেমীদের। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছাড়াও দর্শনার্থীরা ভিড় করছে এক পলক জারুল-সোনালুর সৌন্দর্য দেখতে।

প্রকৃতির এই সুন্দর সাজে ৭৫ একরের পুরো ক্যাম্পাস যেন সেজেছে নতুন রূপে। গ্রীষ্মের হলুদ রঙের সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা, জারুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয় কোমলতা আর দৃষ্টিনন্দন বর্ণোচ্ছটা ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলেছে। বেগুনি আভায় সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর প্রাঙ্গণ। মনে হবে গাঢ় বেগুনি রঙের বন্যা বইছে সেখানে। বকুলের ঘ্রাণে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট খেলার মাঠ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ ও স্বাধীনতা স্মারক মাঠের উত্তর পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছগুলোর শাখায় শাখায় ফুটেছে রক্তবর্ণ ফুলের সমাহার। এর ফলে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় দুই নাম্বার গেইটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। এই কারণে এই সড়কের নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণচূড়ারোড।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, পথচারী বা ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সময় হৃদয় কাড়ে নয়ন জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া। মনের অজান্তেই মুখে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে আসে ‘বাহ! কী চমৎকার দৃশ্য। কী মায়াবী জাল বিস্তার করেছে আকাশের পানে।’ 

শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পার্কের মোড়ে অবস্থিত বেরোবির ক্যাম্পাস জুড়েই আগুন রাঙা সেই কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য আলো ছড়াচ্ছে। গাছে গাছে নয়ানাভিরাম রাঙা ফুলের মায়া। দূর থেকে দেখলে মনে হবে গাছগুলোতে আগুন লেগেছে, কাছে গেলে চোখ আটকে থাকে রক্তিম আভার ফুলের সমাহারে। গাছের নিচে পড়ে থাকে অজস্র ঝড়াপাপড়ি, যেন মনে হয় রক্তবর্ণ লাল গালিচা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক, চত্বর ও রাস্তার পাশে অসংখ্য গাছ এ ফুলের রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। এছাড়াও জারুল, হিজল, বকুল, সোনালুসহ নাম জানা অজানা অসংখ্য ফুলের গন্ধে ভরে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ। গন্ধহীন এ ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। নমনীয় কোমল, মধ্যে লম্বা পরাগ। ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেই!

গাছগুলোর শাখায় শাখায় ফুটেছে রক্তবর্ণ ফুলের সমাহার। ফলে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে সেজেছে কৃষ্ণচূড়ারোড। কৃষ্ণচূড়া যেন সূর্যের সবটুকু উত্তাপকে শুষে নিয়ে সৌন্দর্যের এক অভিনব উত্তাপ ছড়াচ্ছে পুরো এই ৭৫ একরে। সে উত্তাপেই পুড়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য বিলাসী সবার মন।

কৃষ্ণচূড়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, প্রকৃতির সব সৌন্দর্যে যেন অপরূপ সাজে সেজেছে প্রাণের কৃষ্ণচূড়া রোড, দুই পাশে সারি সারি করে লাগানো এই মাঝারি আকারের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো মনমাতানো রঙ আর সৌরভ দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেকটা ফাঁকা এই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই দূর থেকে দূরে চোখে চোখে পড়ছে এই সবুজের বুকে লাল কৃষ্ণচূড়া পুষ্পরাজি। ঋতুরাজ বসন্ত পেরিয়ে গেলেও মনে হচ্ছে প্রতিটি দিনই এখন বসন্ত। এই জারুল, কৃষ্ণচূড়া, শ্বেতশুভ্র কাশফুল আর সোনালু বহুগুণে রূপবতী করে তোলে প্রাণের এই ৭৫ একরের ক্যাম্পাসকে। 

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক খান বলেন, কৃষ্ণচূড়া যেন ভাষার রঙ হয়ে বেরোবির বুকে আবার আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। রোমাঞ্চকর প্রেমালাপ যেন উপযুক্ত হয়ে উঠেছে এই কৃষ্ণচূড়ার লালিমায়। এই সৌন্দর্য পৃথিবীর অমৃত লহরীর মতো যার ব্যাখ্যার অন্ত নেই। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় হলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এখন ক্যাম্পাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুলগুলো হলো জারুল, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু। আবার এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাল সোনাই। এখানে প্রায় ৪০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল ফোটা শুরু করে এবং এই ফুলগুলো গ্রীষ্ম মৌসুমকে উজ্জ্বল করে রাখে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং বাইরে থেকে আসা সৌন্দর্যপিপাসু লোকদের পিপাসা মিটাতে সাহায্য করে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –