• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট পাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০  

শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় সুখবর দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ‘নামমাত্র’ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ পাবে। করোনাকালে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক এই সেবা দিতে সম্মত হয়েছে।

দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৯ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরেও অনলাইন ক্লাস চলছে, তাই সব ছাত্রছাত্রীকে একই ধরনের ইন্টারনেট সেবা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, করোনা মহামারীর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে সরকার নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ প্রদানের এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এই পদক্ষেপ বিশেষ সময়ে উচ্চশিক্ষায় যুগান্তকারী অবদান রাখবে। এজন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং টেলিটককে ধন্যবাদ জানান।

জানা গেছে, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিডিরেন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করছে। এতদিন এই সেবাটি কেবল শিক্ষকরা নিতেন। করোনা পরিস্থিতি শুরু হলে এই প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সাধারণ পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়।

কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় পক্ষকেই বাজার দরে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস নেয়া ও গ্রহণের কাজ করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রস্তাব আসে অনলাইনে ক্লাসে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট চার্জ কমানো হোক। পারলে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের এই সেবা দেয়া হোক।

দেশে বর্র্তমানে ১৫৪টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলোর মধ্যে ৪২টি পাবলিক ও ৬৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিডিরেন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করছে। বর্তমানে মাত্র ৭ হাজার সক্ষমতা আছে এই প্ল্যাটফরমের। তবে নতুন সিদ্ধান্তের কারণে এটির সক্ষমতা ৪০ লাখ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীরা জুম অ্যাপলিকশনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এজন্য শিক্ষার্র্থীদেরকে টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় থাকতে হবে। ইউজিসি এ ব্যাপারে গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

গুগলও এক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বলে ইউজিসির শীর্ষ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে জুম ব্যবহারের জন্য দরকার ইন্টারনেট। কম মূল্যে জুমের সার্ভিস পেলেও ইন্টারনেট এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।

এ অবস্থায় টেলিটক কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে ১০০ টাকা রিচার্জের বিনিময়ে এই সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। রিচার্জকৃত টাকা শিক্ষার্থীর মূল অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এই টাকা ভয়েস কল ও ডাটার জন্য ব্যয় করা যাবে।

অব্যবহৃত টাকা পরবর্তী রিচার্জে যোগ হবে। তবে ১০০ টাকার নিচে রিচার্জ করলে এবং সিমে ন্যূনতম ডাটা না থাকলে এই সুবিধা ভোগ করা যাবে না।

ইউজিসি সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরামর্শে কিছুদিন আগে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিতে অনুরোধপত্র পাঠায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩৯ লাখ শিক্ষার্থী নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের এই সুবিধা পাচ্ছে। সুবিধার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও থাকবেন। দেশে বর্তমানে প্রায় ৩২ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আছেন।

তিনি আরও জানান, ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্বল্প খরচে ডিজিটাল ডিভাইসের এক্সেস এবং ইন্টারনেট সুবিধা পেতে পারে, এ বিষয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা যেন বিনামূল্যে অনলাইন এডুকেশন রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে, সে লক্ষ্যে বিডিরেন ২১ জুলাই টেলিটকসহ সব মোবাইল অপারেটরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পত্র পাঠায়।

পরে এ নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। টেলিটক ২৮ আগস্ট এ ব্যাপারে সম্মতিপত্র দিয়েছে। পত্রে টেলিটক জানায়, জাতীয় এ সংকটে বিডিরেনের মহতি এ উদ্যোগে যুক্ত হতে পেরে সংস্থাটি ভাগ্যবান মনে করছে।

টেলিটক মনে করে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশাল একটি অংশ অনলাইন ক্লাসের সময় তাদের নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

এদিকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের পিতামাতার সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট দেয়ার এই উদ্যোগ যুগান্তকারী।

শিক্ষাবান্ধব সরকারের এটি মহতি উদ্যোগ। তবে এই উদ্যোগ আরও জনবান্ধব হবে যদি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরও একই মূল্যে ইন্টারনেট দেয়া হয়। সব শিক্ষার্থীকেই এই সুবিধাটি দেয়া হোক। এজন্য প্রয়োজনে বিশেষ সিম প্রবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –