• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পঞ্চাশের উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে তরুণদের মনে

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১  

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
ডিসেম্বর এলেই  বিজয়ের সুবাস বইতে থাকে মনে প্রাণে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। নানা আয়োজনে প্রতিবছরই বিজয় দিবস উদযাপন করা হলেও এবারের বিজয় দিবসের তাৎপর্য আলাদা। বাংলাদেশ এবার পা রেখে পঞ্চাশ বছরে। পঞ্চাশের উচ্ছাসের এই জোয়ার বইছে তরুণদের মনেও। সকল বাঙালি ও সকল বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছেই দিনটি আনন্দের। বিজয়ের এই দিনে আলাপে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন তরুণ। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা তাদের ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।

তরুণ কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘নয় মাস যুদ্ধের পরে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। অর্জিত সেই স্বাধীনতা নানাভাবে হরণ করার চেষ্টা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। স্বাধীন দেশে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নানাবিধ চক্রান্ত মোকবিলা করে বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আসুন আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার মান অক্ষুণ্ণ রাখার শপথ করি। সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হই।'

তরুণ পুষ্টিবিদ ও সংগঠক আজমেরী রহমান সিন্থিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ছিল—একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই স্বাস্থ্যবান জাতি। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতকে শুধু গুরুত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, ব্যাপক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্যে ১ টি হচ্ছে—সংবিধানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা পাওয়াকে মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সুরে তাল মিলিয়ে বলতে চাই, বিজয়ের ৫০ বছরের পূর্তিতে যাতে এ দেশের আনাচে কানাচে পুষ্টি ছড়িয়ে পড়ে সেই লক্ষ্যে সরকারীভাবে পুষ্টিবিদ নিয়োগ করা হোক। উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল নীতি হলো, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে পুষ্টিবিদরাও মানুষকে সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্য নির্বাচন করতে সাহায্য করার মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে দেশ রূপান্তরিত হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে।'

সামাজিক সংগঠক ও আলোর প্রদীপের চেয়ারম্যান এম এম মেহেরুল বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, মুক্তির দিবস। বিজয় দিবস আসলে আমাদের ভাবনা মনের হৃদয়ে উঁকি দিতে থাকে। আমার ভাবনা হলো সব ধরনের বৈষম্যহীন একটি নিরাপদ দেশ। যেখানে জাতি ধর্ম-বর্ণ সকলে সকল ভেদাভেদ ভূলে এক হয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সোনার বাংলা গড়তে মনোযোগী হবে। স্বাধীন দেশ হবে মানুষের জন্য নিরাপদ। মাথার উপরের এক আকাশ আর পায়ের নিচের একই মাটির মানুষের মধ্যে থাকবে না কোনো দ্বন্দ্ব। সকল মানুষ অন্ন পাবে, বাসস্থান পাবে, সুচিকিৎসা পাবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আদর্শ জাতি গঠনে মনোযোগী হবে। ধর্মান্ধতার বীজ মূলোৎপাটন করে দেশটা হবে সকল মানুষের। এত কষ্টে অজির্ত বিজয়ের কেবল তখনই পূর্ণ মূল্যায়ন করা হবে যখন নিজেরা নিজেদের আপন ভাবতে পারব।

নাট্যকর্মী সিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তারুণ্য নির্ভর সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত হয়েছে জন্মের পঞ্চাশ বছরে এসে। দেশি বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বারবার লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ ভূখণ্ড। পাঁচ দশকে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং অনৈক্যের বলি হয়েছে তরুণরা।  বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে এই তরুণ প্রজন্মকে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের লাখ লাখ উচ্চ শিক্ষিত বেকারসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে আগামী বিশ বছরেই উন্নতির চরম শিখরে যেতে পারে বাংলাদেশ। পাঁচ দশকে অনেক বড় বড় সফলতা অর্জিত হয়েছে যা অস্বীকার করা অনুচিত। কিন্তু এত বড় বড় উন্নয়ন ম্নান হয়ে যায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সাম্প্রদায়িক ও কুচক্রী মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকারী মহলের অপতৎপরতায়। বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসাম্প্রদায়িক, অপসংস্কৃতিমুক্ত, সুখি ও স্বনির্ভর দেশ গঠনে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে রাষ্ট্র তরুণদের কাজে লাগাবে এটাই সুবর্ণজয়ন্তীর প্রত্যাশা।

সমাজকর্মী রাশেদুজ্জামান রণ বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক। তবে দেশের মানুষের নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত চাহিদা আমাকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। আশাকরি পরবর্তী প্রজন্ম নীতি ও আদর্শ মেনে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপে সাফল্য আসবে। লাল-সবুজ আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’

তরুণ শেফ আসিফ রাহী বলেন, ‘বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু আমরা শুধু তরুণ প্রজন্মকে দোষারোপ করতেই অভ্যস্ত। আর তাদের দোষ একটাই এই যে, ২০-২৫ বছর বয়সে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা শূন্যের কোঠায়, অপরদিকে তাদের কাছে চাকরির জন্য চাওয়া হয় ৮-১০ বছরের অভিজ্ঞতা। আর এ সকল কিছুর সংঘাতে যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য সে বিদেশে গমন করে এর পাশাপাশি কাজও করা শুরু করে তখন আমরা এর জন্য অনুশোচনা করি। আসুন সময়ের সাথে নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করে তরুণ প্রজন্মকে আগলে রাখতে শুরু করি। এটাই বিজয় দিবসে আমার চাওয়া।'

তরুণ গল্পকার সাকি সোহাগ বলেন, 'বিজয়ের অর্ধশতবর্ষী বাংলাদেশকে অভিনন্দন। দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পরা একটি লাল সবুজ যেভাবে এগিয়ে এসেছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে সেটাই অব্যাহত থাকুক। দেশের শিল্প কলকারখানাগুলোয় বিনিয়োগ যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে অগ্রসর হতে যাচ্ছে এবং হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিকচক্র বেশ মজবুত হচ্ছে। বেলাশেষে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় দেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। সরকারিভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই বাংলাদেশের এগোনোটা আরও সহজ সমৃদ্ধ হবে বলে আমি আশাবাদী। পঞ্চাশে পদার্পণ করা বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া, এই উন্নয়নধারা অব্যাহত থাকুক এই কামনা করছি।'

লেখক নূরে জান্নাত বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার করে একান্নতে পা দেবে সোনায় মোড়ানো আমার মা, ভালোবেসে সোনার বাংলা ডাকি আমরা সব সন্তানেরা, সংক্ষেপে বাংলা। বাংলাকি সত্যিই সোনার আছে? নাকি ক্ষুধা, দারিদ্রতা, ধর্ষণ, বেকারত্ব, হানাহানি, দূর্নীতি, অনিয়মের আগুনে পুরে ছাই! যে শান্তি ও সমতার স্বপ্ন নিয়ে ত্রিশ লক্ষ ভাইয়েরা শহীদ হলো, দুই লক্ষ মায়েরা সম্ভ্রম হারালো, সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল স্বাধীনতার এই এত পথ পেছেনে ফেলে আসার পরেও। স্বধীনতা শব্দটা পরাধীন এই সকল সমস্যার কাছে। বিজয়ের গৌরব অটুট থাকুক ক্ষুধা, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, ধর্ষণ, হানাহানি, দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ হয়ে। হাসি থাকুক সবার মুখে এই বিজয়ে।'

সবাই তাল মিলিয়ে বলেছেন, সোনার বাংলাদেশ হোক ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত। হোক অসম্প্রদায়িক চেনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে বসবাস করবে সকল ধর্মের বর্ণের শ্রেনীর মানুষ। যেখানে থাকবেনা কোনো দুর্নীতি, খুন খারাপি, সন্ত্রাসী রাহাজানী। বিজয়ের পঞ্চাশে এইটাই সকলের চাওয়া। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –