• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

পণ্য উৎপাদনে ইসলামী মূল্যবোধ

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২১  

মানুষ খেয়ে-পরে জীবন ধারণ করে। প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে সবাই খাবারদাবার, চলা-ফেরা, পোশাক-পরিচ্ছদে জীবনকে ভালোবেসে বেঁচে থেকেছে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জীবনের দায়ে উৎপাদন করেছে আহার, বস্ত্র ও জীবন ধারণের বহু সরঞ্জাম।

কালের পরিবর্তনে সময়ের প্রয়োজনে জীবনের বাস্তবতায় মানবজাতি সম্মুখীন হয় আবিষ্কার ও উৎপাদনের। দরকারে মানুষের চাহিদাকে মর্যাদা দিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে নানা কিছু। মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুধাবন করে একজন producer বা উৎপাদনকারী কিংবা প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করছে অনেক কিছু। উৎপাদনকে সামনে রেখে একজন উৎপাদনকারী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইসলাম কিছু মূল্যবোধ নির্ধারণ করে দিয়েছে।

শুধু হালাল পণ্য উৎপাদন করা : মানুষের জীবন চাহিদার আলোকে উৎপাদনকারী নানা কিছু উৎপাদন করে আসছে। হয়তো পৃথিবী টিকে থাকার সময় পর্যন্ত করবে। প্রয়োজন সামনে রেখে একজন উৎপাদনকারীকে ইসলাম বলে-‘হালাল পণ্য উৎপাদন করতে।’ হালাল পণ্য উৎপাদনে আছে খোদায়ি সন্তুষ্টি। মানুষের দেহের উপকার, সুস্থতা, মানসিকতা ভালো থাকা নির্ভর করে হালাল পণ্য গ্রহণ ও আহারের ওপর। হালাল পণ্য সুন্দর আলোকিত ও আলোড়িত পৃথিবী উপহার দিতে পারে। পক্ষান্তরে হারাম পণ্য মানুষের মনমানসিকতা নষ্ট করে মানবতাকে কলুষিত ও বিবর্জিত করে। হালাল পণ্য আহার ও উৎপাদন করতে মহান আল্লাহ নির্দেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো। যেগুলো আমি তোমাদের রুজি হিসেবে দান করেছি। এবং শুকরিয়া আদায় করো আল্লাহর, যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২ )

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবন যাপন করবে, সুন্নত অনুযায়ী আমল করবে এবং কোনো মানুষকে কষ্ট দিবে না, সে জান্নাতি হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৯)

উপকারী ও স্বাস্থ্যকর পণ্য উৎপাদন করতে হবে : মানবজাতির স্বাস্থ্য সুস্থতার ওপর নির্ভর করে ভালোভাবে বেঁচে থাকা। মানুষের উপকারে এগিয়ে আসা। আল্লাহর ইবাদতে দীর্ঘ প্রহর ধরে একান্ত নিমগ্ন থাকা। এবং পৃথিবীর জীবনে সমাজ ও রাষ্ট্রের সফল উদ্যোগী, সুনাগরিক হওয়া। শরীর সুস্থ থাকলে মানবিক গুণাবলিতে উৎকর্ষ সাধন করা যায়। অসাধ্যকে সাধন এবং দেশের জন্য দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া যায়। জাতি, দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো রাখতে এবং তাদের সৃজনে নির্মাণে মহীয়ান ও বলিয়ান করতে হলে পণ্য উৎপাদন করতে হবে উপকারী ও স্বাস্থ্যকর। ক্ষতিকর ও অস্বস্তিকর পণ্য উৎপাদন না করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আগামীর স্বপ্ন নির্মাণ করতে হবে। তাহলে দুনিয়ার জীবন হবে প্রশংসিত ও পুণ্যের। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ কিংবা ফসল উৎপাদন করে আর তা থেকে পাখি কিংবা মানুষ অথবা চতুষ্পদ জন্তু কিংবা পাখি কিছু খায় তাহলে তা তার পক্ষ থেকে সদকা হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৮৬৫)

আরেক হাদিসে বিধৃত হয়েছে, আবু জার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসে তিন শ্রেণির লোকের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি।’

আমরা প্রশ্ন করলাম,  ‘হে আল্লাহর রাসুল, এরা কারা? এরা তো ব্যর্থ ও ধ্বংস হলো।’ তিনি বলেন, ‘(তারা হলো) উপকার করার পর তার খোটাদানকারী, পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় পরিধানকারী এবং নিজের পণ্যদ্রব্য মিথ্যা শপথ করে বিক্রয়কারী।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২১১)

উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতে হবে : সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করে দেশ চলতে পারে না। উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন উপেক্ষা করে সংখ্যালঘিষ্ট জনগণের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনের আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধান মানুষের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। কোনো বিশেষ জাতি বা গোষ্ঠী কিংবা গোত্রকে কেন্দ্র করে এসব বিধান দেওয়া হয়নি। ইসলামে সব মানুষ সমান। সুতরাং সাধারণ মানুষের প্রতি দৃষ্টি রেখে উৎপাদন করতে হবে।

উৎপাদন উপাদান, উৎপাদিত পণ্য ও উৎপাদন প্রসেস পরিবেশবান্ধব হতে হবে : পরিবেশ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। সুষ্ঠু সুন্দর জীবন দান করে। প্রাণে প্রাণ সঞ্চার করে। হৃদয়কে কোমল ও নির্মল করে। মনমেজাজকে ফুরফুরে ও জিইয়ে রাখে। স্বচ্ছ শোভন পরিবেশে জীবন ধারণের স্বাদই ভিন্ন আমেজের। পরিবেশ সুচারু ও নির্মল থাকলে দেশ-জাতি সর্বোপরি সবাই ভালো থাকে। আল্লাহ তাআলা পরিবেশ উপস্থিত ভূমির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃতভূমি, আমি একে সজ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর এবং প্রবাহিত ঝরনা, যাতে তারা ফল পায়।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৩৩)

কিন্তু আজকাল কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের প্রতিবেশ নষ্ট করে তুলছে। পরিবেশ দূষিত করছে। নির্মল পরিবেশের প্রধান উপকরণ বৃক্ষকে জালিয়ে ভস্ম ও লতাপাতা শূন্য মরুভূমি বানিয়ে ফেলছে। নদীর পানিতে আবর্জনা পয়মাল ফেলে দূষিত ও ব্যবহার অনোপযোগী করে তুলছে, যার ফলে জগতের শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য মানুষ দুর্যোগ ও বিপন্নতায় ভুগছে। মহানবী (সা.) পানিতে আবর্জনা, মলমূত্র ও বর্জ্য ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা লানত আনয়নকারী তিন ধরনের কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখো। তা হলো, পানির উৎস, রাস্তা-ঘাটে ও বৃক্ষের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪ )

ইসলামে আবদ্ধ কম পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষিদ্ধ। সুতরাং উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধন করা যাবে না।

শরিয়তের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করতে হবে : শরিয়তে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ কোনো উৎপাদন করা যাবে না। মাকাসিদে শরিয়ার দিকগুলো হলো—ক. মানুষের জীবন ও পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষা। খ. মানুষের দ্বিন বা ধর্মবিশ্বাস রক্ষা। গ. মানুষের বুদ্ধি-বিবেক রক্ষা। ঘ. মানুষের সম্মান-মর্যাদা রক্ষা। ঙ. মানুষের সম্পদ রক্ষা। ইসলাম মানুষকে উৎপাদনকারী হতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে। তাকে সত্ভাবে উৎপাদনে স্বাক্ষর রেখে জান্নাতে আসার আগাম সুসংবাদ শুনিয়ে দেয়।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –