• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পার্বতীপুরে ধর্ষণের পর চম্পাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২০  

আর দশজনের মতোই স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন চম্পা (ছদ্মনাম)। কিন্তু হঠাৎ কী হলো যে, লাশ হওয়ার আগে নিজেই ডায়েরিতে খুন হওয়ার কথা লিখে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে চম্পার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর চম্পাকে হত্যা করে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় বুধবার ভোরে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউপির খোর্দবাগবাড় এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আনিছুর রহমান, অটোচালক রাজ মিয়া ও আশিকুজ্জামানকে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য তাদের দিনাজপুর আদালতে নেয়া হয়েছে।

রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন চম্পা। বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউপির মিশনপাড়ায়। এ ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা।

স্থানীয় ও স্বজনরা জানান, ৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন চম্পা। বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরের দিন তার ফিরে আসার কথা ছিল। শেষবার ফোনে মাকে চম্পা বলে যান ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসব’। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিন বাড়িতে না ফিরলে চিন্তায় পড়েন পরিবারের লোকজন।

পরের দিন মঙ্গলবার ভোরে পার্বতীপুর উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার করে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের সময় ওড়না দিয়ে তার হাত-পা গলায় সঙ্গে বাঁধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার-কামিজ। দাঁতগুলো ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত ছিল মুখ। দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যার পর অটোচালিত গাড়িতে করে সেখানে লাশটি ফেলে যায়। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এদিকে, লাশের পরিচয় জানতে ওই দিন সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্তদল মৃতের হাতের আঙুলের ছাপ নেয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চেহারার ছবি মিলে যাওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত হন তারা। পরে জানতে পারেন তার বাড়ি বদরগঞ্জে। এতে বদরগঞ্জ থানা পুলিশ সার্বিকভাবে জড়িতদের গ্রেফতারে সহায়তা করে।

এ ঘটনার পর দিনাজপুরের অ্যাডিশনাল এসপির (ফুলবাড়ী সার্কেল) নির্দেশে পার্বতীপুর থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। তারা বদরগঞ্জের রামনাথপুর ইউপির খোর্দবাগবাড় এলাকার মূলহোতা আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুর রহমান তার বোনজামাই অটোচালক বাবু মিয়ার ছেলে রাজ মিয়া ও পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউপির দুর্গাপুর এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আশিকুজ্জামানকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

এদিকে, চম্পার বাবা বলেন, একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় চম্পাকে উত্ত্যক্ত করতো। হোস্টেল থেকে বাড়িতে এলে সে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয় আমার মেয়েকে। সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে চম্পা তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। এ কথা ও নিজে বলেছে যে ও আমাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী’। বাড়ি থেকে যাওয়ার কোনো এক সময় চম্পা ডায়েরিতে এসব লিখে যায়। আজ বুধবার সকালে পড়ার টেবিল থেকে চম্পার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্মমভাবে মেয়েটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে আরো কেউ জড়িত আছে কি না তা জানতে তদন্ত চলছে।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান সিরাজুল ইসলাম।

পার্বতীপুর থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আলামত হিসেবে বেশকিছু জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে নিহতের মোবাইল ফোনটি পাশের একটি পুকুর ফেলে দেয়ায় সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –