• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

পার্বতীপুরে সেই সুদের কারবারি বিরুদ্ধে আরো এক মামলা

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২১  

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সুদের কারবারের নামে প্রতারণাকারী মোছা. নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছে। বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৫ (পার্বতীপুর) এ গত বুধবার দায়ের করা এ মামলায় মো. আজিজুল ইসলাম নামে আরো এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নং সিআর-৭২/২০২১, ধারা ৪০৬,৪১৯,৪২০ ও ৫০৬ (ওও)। মামলার বাদী পার্বতীপুরের ৮৪ নং প্রামাণিকপাড়া সরকারি পাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দীন।

এর আগে প্রতারণাকারী নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছেন। তারা হলেন, প্রাথমিকের শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন, আনিছুর রহমান, মোছা. লায়লা খাতুন, সমাজসেবা অফিসের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. এসরাফুল আলম, স্ত্রী ফেরদৌসি আরা, শ্বাশুড়ি, মাধ্যমিকের শিক্ষক আব্দুল জলিল, এনামুল হক ও মাদরাসা শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন। তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি দুটি করে মামলা করেছেন। অন্যদিকে, নাজমা খাতুন ঢাকা, রাজশাহী, নীলফামারী, দিনাজপুর থেকে এসব শিক্ষক ও অন্যদের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার দেখিয়ে লিগ্যাল নোটিশ ও মামলা করেছেন আদালতে। নাজমা খাতুনের দায়ের করা প্রতিটি মামলা হয়রানিমুলক বলে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগীরা। 

নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমাকে ব্যাংক থেকে কনজুমার লোন দেওয়ার কথা বলে ঋণ ফরম পূরণ করে নিয়েছেন নাজমা খাতুন। তিনি আরো বলেন, পরে জানতে পারি নাজমা খাতুন আমাকে মাসিক ১৫ পারসেন্ট চক্রবৃদ্ধি সুদে দেড়লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন। ঋণ ফরম পূরণ করার সময় ৩টি ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর করে নেন তিনি। এছাড়াও ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেন। ঋণের টাকা সুদাসলে ৫ গুণ বেশি দিয়েও তার জিম্মায় রাখা কাগজপত্র ফেরত দেননি আমাকে। সিআর-৪৪/২০২০ নম্বরের একটি মিথ্যা মামলায় পুলিশ গত ১৭ ফেব্রুয়ারিতে আমাকে অমানবিকভাবে গ্রেপ্তার করে রাতের বেলা। আমি একজন শিক্ষক মানুষ, এ লজ্জা রাখি কোথায়। 

শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন, লায়লা বানু, গিয়াস উদ্দীন, বেলাল হোসেন, আনিসুর রহমান, সমাজসেবা অফিসের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী এসরাফুল আলম কালের কণ্ঠকে জানান, নাজমা খাতুন সোনালী ব্যাংক হুগলী পাড়া শাখার ম্যানেজার ও অন্য স্টাফের সাথে যোগসাজসে ব্যাংকের টাকায় চক্রবৃদ্ধি সুদের কারবার করে মানুষকে নিঃস্ব করেছে। ৫/৬ গুণ টাকা পরিশোধ করার পর কাউকে জামানত হিসেবে রাখা কাগজপত্র ফেরত দেননি।

গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমি আগের ইউএনও শাহনাজ মিথুন মুন্নির কাছে মৌখিকভাবে আমার নিজের ও অন্যান্য শিক্ষকদের অসহায়ত্বের কথা বলার পর গত ২০২০ সালের ২৪ মার্চ এক অভিযান চালিয়ে নাজমা খাতুনকে আটক করেন। তার কাছে সোনালী ব্যাংক হুগলী পাড়া শাখার বহু অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষর করা খালি চেকের পাতা পাওয়া যায়। ব্যাংকের সিলসহ অপরাধজনক কাজে ব্যবহার করার জন্য প্রমাণক ৩৫টি আইটেম উদ্ধার করা হয়। এদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. শাহনাজ মিথুন মুন্নি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সুদের কারবারের নামে শতভাগ প্রতারক নাজমা খাতুনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও একটি মুচলেকা লিখে নিয়ে ছেড়ে দেন। মুচলেকায় অঙ্গীকার করা হয়েছিল, সমস্ত চেক, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্টদের মাঝে ফেরত দিবেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো মামলা মোকদ্দমায় ব্যবহার করে মানুষকে জেরবার করা হচ্ছে। 

সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে সহকারী শিক্ষিকা লায়লা বানু জনিয়েছেন। এ ছাড়াও পার্বতীপুরের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি আবেদন করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন এ শিক্ষিকা। 

উল্লেখ্য, মোছা. নাজমা খাতুন একজন গৃহিনী। তার স্বামীর নাম মো. নুর ইসলাম (তালাকপ্রাপ্ত)। বাড়ি উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের যশাই সৈয়দপুর গ্রামে। ডিভোর্স হওয়ার পর নাজমা খাতুন তার দুই ছেলেকে নিয়ে বাবা জয়নাল আবেদীনের তাজনগর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সেখানে থেকে ২ বছর রাজাবাসর স্কুল অ্যান্ড কলেজে চকলেট বিক্রি করেন। এরপর গত ৮ বছর ধরে সোনালী ব্যাংক হুগলী পাড়া শাখায় ম্যানেজারসহ অন্য স্টাফদের সাথে যোগসাজস করে ২ শতাধিক স্কুল শিক্ষক ও ৫০ জনের বেশি অন্য পেশার মানুষকে এক লাখ, দুই লাখ টাকা করে চক্রবৃদ্ধি হারে লোন দিয়ে এসেছেন। এভাবে সে প্রায় ২০ কোটি টাকার বাড়ি, জমি ও ব্যাংক ব্যালান্স করেছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষক এবং যাদের জমি বাড়ি জোরপূর্বক দলিল করে নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জন শিক্ষক এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। নিঃস্ব হওয়া এসব ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টিম গঠন করে তদন্ত করা হলে নাজমা খাতুনের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পেছনে কারা কিভাবে জড়িত ছিলেন সব কিছু বেরিয়ে আসবে। 

ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার প্রদীপ কুমার রায় জানান, অভিযোগ তিনি জেনেছেন, শুনেছেন। পার্বতীপুর উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার নাশিদ কায়সার রিয়াদ কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –