• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

প্রতিদিন দুই কিলোমিটার এক পায়ে লাফিয়ে স্কুলে যায় সুমাইয়া

প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২২  

সুমাইয়া আক্তার চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউপির আলীপাড়ার রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে। সে উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

সুমাইয়ার বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখন তার গুটিবসন্ত হয়। কিছুদিন পর তার জ্বর হয়। এরপর থেকে তার পা আস্তে আস্তে বেঁকে যেতে থাকে। সুমাইয়া বড় হয়, কিন্তু পা আর সোজা হয় না। এক পায়েই হাঁটা শুরু করে। 

বাঁকা পা নিয়েই বড় হতে থাকে সুমাইয়া। ৫ বছর বয়সে তার মা-বাবা তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। তাকে প্রায় দুই কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে হয় লাফিয়ে লাফিয়ে।

মা-বাবার সংসারে চরম অভাব-অনটন। তবুও তার রিকশাচালক বাবা মেয়েকে দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যায়।চিকিৎসকরা জানান, সুমাইয়ার পায়ে অস্ত্রোপচার করলে পা ঠিক হয়ে যাবে। এ জন্য তিন লাখ টাকার মতো প্রয়োজন হবে। এ শুনে তার বাবা বাড়ি চলে আসেন।

সুমাইয়ারর বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বাড়িতে থাকলে মেয়েকে কোলে করে স্কুলে আনা-নেয়া করি।  অভাবের সংসার। তাই রোজগারের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। মেয়ের এভাবে স্কুলে যাওয়া-আসার কষ্ট দেখে বাবা হিসেবে সইতে পারি না। 

চিকিৎসকরা বলেছেন, তিন লাখ টাকা হলে তাকে ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আমার পক্ষে রিকশা চালিয়ে এত টাকা খরচ করা সম্ভব না। তাই মেয়ের চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, ছোটবেলায় খুব সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল সুমাইয়া। দুই বছর বয়সে তার গুটিবসন্ত হয়। এরপর জ্বরটর হলে একদিন দেখি বাঁ পা বাঁকা হয়ে আছে। এরপর থেকে তার পা ছোট হয় যায়। আর মাটিতে পড়ে না। মেয়ে যখন স্কুলে যায়, তখন লাফিয়ে লাফিয়ে যায়। এই দৃশ্য মা হয়ে আর সহ্য করতে পারি না। তার কষ্ট দেখলে দুচোখের পানি আটকাতে পারি না। শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আমার মেয়ে যেন সুস্থ হয়ে যায়। সবার মতো স্বাভাবিক দুই পা দিয়ে হেঁটে চলাফেরা করতে পারে।

চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সৌভিক রায় বলেন, বসন্তরোগ হলে পা বেঁকে যাওয়ার কোনো নজির নেই। শিশুটিকে না দেখে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যাবে বসন্তরোগে পা বেঁকে গেছে নাকি অন্য কোনো কারণে বেঁকে গেছে।

উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, সুমাইয়ার ইচ্ছাশক্তি অভিভূত করেছে। চিকিৎসার অভাবে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। তার পড়াশোনা খুবই ভালো। আমরা তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে দেখতে চাই।  

চিরিরবন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু বলেন, একটি কোমলমতি প্রাণের জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।

চিরিরবন্দর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, স্কুলছাত্রী সুমাইয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়টি জেনেছি। আমার অফিসে তাদের ডেকেছি। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্রুত ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –