• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

`প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবার চাওয়া নয়, কৃতজ্ঞতা জানাবে রাজশাহীবাসী`

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩  

আগামীকাল রোববার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা। দীর্ঘ ৫ বছর পর এই মাঠে আবারও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই জনসভায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে এবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়ার পালা নয়। বরং রাজশাহীতে যে উন্নয়ন করেছেন, তার জন্য স্থানীয়দের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবেন। আর প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকায় ভোট চাইবেন। দেবেন নানা দিক নির্দেশনা। গত ১৪ বছরের উন্নয়ন এবং ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা বলবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজশাহীতে সাজ সাজ রব। নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছাস বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীতে অবস্থান নিয়ে আছেন। রোববারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনসভার মঞ্চ ও মাঠ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী কালের জনসভায় আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে জনসমর্থন চাইবেন। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। রাজশাহী অঞ্চল বদলে গেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। রাজশাহীকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। কারণ রাজশাহী আগে পিছিয়ে পরা জনপদ ছিল। এই যে বদলে যাওয়া দৃশ্যপট, দেশের উন্নয়নের অর্জন, রাজশাহীর অগ্রগতির অর্জন এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই কথা বলবেন। তিনি কথা বলবেন স্মার্ট বাংলাদেশকে ফোকাস করে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচন শুরু হবে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। আগামীকালের জনসভায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার বিষয়ে জনগণের ম্যানডেট জানতে চাইবেন। নির্বাচন নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষকে বার্তা দেবেন নেত্রী। আগামীকালের জনসভায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি জনসমাগম ঘটবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের। 

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এই জনসভাটি রাজশাহীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আসছেন। এই ৫ বছরে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বিসিক শিল্পনগরী-২, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। এর জন্য জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তিনি আশা করেন, রাজশাহীর জনসভায় অন্তত ৭ লাখ মানুষের সমাগম হবে।

খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, মাদ্রাসা মাঠটি ঐতিহাসিক একটি মাঠ। এখানে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই কারণে মাদ্রাসা মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। মাদ্রাসা মাঠের পাশে যে ঈদগাহ মাঠ রয়েছে, সেটিও আমরা মাঠের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছি। এই দুটি মাঠসহ আশপাশে যত জায়গা আছে, সড়ক আছে, মাদ্রাসা মাঠ থেকে জিরোপয়েন্ট, সিএন্ডবি মোড় থেকে লক্ষীপুর, ঘোষপাড়া মোড়সহ ওই সমস্ত অঞ্চলকে আমরা জনসভা মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে ২২০টি মাইক থাকবে, ১২টি এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে যাদের মাঠে জায়গা হবে না, তারা বাইরেও প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পারেন, বক্তব্য শুনতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। আমরা চাই, সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক। বিএনপি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটাই চাই। তারা গতবার সব দল নিয়ে জোট করেছিল, এবারও জোট করে অংশগ্রহণ করুক। আমরা খেলে জিততে চাই। বিএনপির সাথে খেলেই আমরা জিততে চাই। যেভাবে জিতেছি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার। বিএনপি ২০১৪ সালে যে সহিংসতা করেছিল, এবার সেটির সুযোগ পাবে না। আমরা ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের মোকাবিলা করেছি। এবারও অপচেষ্টা চালালে জনগণ তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন সরকারের অধীনে হয় না। নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তফসিল ঘোষণার পর সরকারের একজন ওসি, ইউএনও কিংবা দারোগা বদলি করার ক্ষমতাও থাকে না। এ সমস্ত চাকরি সবগুলো নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়। সরকার শুধুমাত্র রুটিন কাজ করে। পৃথিবীর কোথাও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই, আছে শুধু পাকিস্তানে। বিএনপি তো পাকিস্তানকে অনুকরণ করে। তাই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। বিএনপি বুঝতে পেরেছে তারা নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারবে না৷ তাই নির্বাচন নিয়ে তাদের এই বাহানা। আমাদের দেশে ভোট হবে সেইভাবে, যেভাবে অস্ট্রেলিয়ায় হয়, ইন্ডিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কন্টিনেন্টাল ইউরোপ, জাপানে হয়, সেভাবে হবে। সেখানে যখন ভোট হয়, সরকার রুটিন কাজ করে। তাদের অধীনে নির্বাচন হয় না। আমাদের দেশেও তাই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই ইভিএম। যে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোট হয়। এতে কারচুপি করার সুযোগ নেই। কিন্তু ইভিএম কিনতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। অর্থাৎ এক বিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাব। এ টাকায় ইভিএম মেশিন আমদানি করতে হবে। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এত বড় প্রকল্প পাস করে ইভিএম কেনা, অর্থনীতির জন্য বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সমীচিন নয়। বিশ্ব মন্দার মধ্যে মানুষের অন্য কল্যাণগুলো আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে। সে জন্য আমরা ইভিএম চাইলেও বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন যত আসনে ইভিএম করুক, আমরা সেটি মেনে নেব। কারণ, মানুষের কল্যাণই আমাদের কাছে প্রাধান্য পায়।’

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –