• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

প্রিয় নবী (সা.)-এর দৃষ্টিতে সেরা মানুষ

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২১  

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। সব মানুষ মৌলিক অধিকার ও সম্মানের ক্ষেত্রে সমান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাদের কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদের দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০)

মৌলিক অধিকার ও সম্মানের ক্ষেত্রে সব মানুষ সমান হলেও জ্ঞান, আল্লাহভীতি ও বিভিন্ন গুণ-বৈশিষ্ট্যে মানুষ অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি কখনো সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৯)

একজন মানুষ অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব পেতে পারে কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে। রাসুল (সা.) হাদিসে বিভিন্ন সময় ওই সব ভালো মানুষের পরিচয় দিয়েছেন। এসব বর্ণনা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়; বরং প্রতিটি গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিজ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। এখানে এমন ১৫টি গুণের কথা বর্ণনা করা হলো—

১. কোরআন শেখা ও শেখানো : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২৭)

২. উত্তম আচরণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম আচরণের অধিকারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৩৫)

৩. ঋণ পরিশোধ : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বসেরা ওই ব্যক্তি, যে ঋণ পরিশোধের বেলায় ভালো।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ২৩০৫)

৪.  মানুষ শঙ্কামুক্ত : রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যার কাছ থেকে সবাই কল্যাণ আশা করে, অনিষ্টের আশঙ্কা করে না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ২২৬৩/২৪৩২)

৫. পরিবারের কাছে ভালো হওয়া : রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে ভালো।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর : ৪১৭৭)

৬. দীর্ঘায়ু ও ভালো কাজ : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সেরা মানুষ সে, যার বয়স দীর্ঘ ও কর্ম ভালো হয়।’ (জামিউল আহাদিস, হাদিস : ১২১০১)

৭. মানুষের উপকারী : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ সে, যে মানবতার জন্য অধিক কল্যাণকর ও উপকারী। (সহিহুল জামে, হাদিস নম্বর : ৩২৮৯)

৮. স্বচ্ছ অন্তর : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ হলো যার অন্তর পরিচ্ছন্ন ও মুখ সত্যবাদী। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, সত্যবাদী মুখ বোঝা গেল; কিন্তু পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী কে? রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে অন্তর স্বচ্ছ ও নির্মল, মুত্তাকি, যাতে কোনো পাপ নেই, বাড়াবাড়ি বা জুলুম নেই, নেই খেয়ানত ও বিদ্বেষ। (সহিহুল জামে, হাদিস : ৩২৯১)

৯. উত্তম প্রতিবেশী : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৪)

১০. চরিত্র ভালো : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৩৫৫৯)

১১. আল্লাহকে বেশি ভয়কারী : আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী মানুষ কে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৬৮৯)

১২. আল্লাহর পথে লড়াইকারী : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সর্বোত্তম মানুষ কে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ওই মুমিন, যে নিজ জীবন-সম্পদ নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৭৮৬)

১৩. যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় : আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১১৯)

১৪. পরিবারের দুঃখ দূর করা : সুরাকা ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত : একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা প্রদানকালে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো যে অন্যের ওপর অত্যাচার করা ছাড়া নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজন থেকে সব অনিষ্ট দূর করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১২০)

১৫. তাওবা করা : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো সে, যে গুনাহ করে ফেললে অধিক তাওবা করে থাকে।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৬৭১৯)

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –