• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

মাকে বাঁচাতে মেয়ের পূজো, ছেলের আবেদন ফেসবুকে

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২  

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার কাশিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রী বিষ্ণপদ রায়ের স্ত্রী শ্রীমতি সান্ত্বনা রানী রায়। আক্রান্ত ব্রেইন টিউমারে। ইতোসধ্যে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে পনের দিনের ব্যবধানে তার দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। এতে করে তার এক হাত আর এক পা প্যারালাইসড (অবস) হয়েছে।

ব্যাংক লোন, ধারদেনাসহ ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করে, ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি একেবারে হয়েছে সর্বশান্ত। আগামী ফেব্রুয়ারীতে আবারো যেতে হবে ফলোআপে। প্রয়োজন আরও চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার। এ অবস্থায় অসুস্থ্য মায়ের সুস্থ্যতার জন্য মেয়ে সুষমা রানী প্রীতি প্রতিদিন পূজো দেয়।

আর ছেলে সুসান্ত কুমায় রায় নিরুপায় হয়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) জানায় আর্থিক সাহায্যের আবেদন। ছেলে পাপন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। মেয়ে প্রীতি রংপুরের পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই বছর আগে চোখের সমেস্যার কারণে প্রথমে ব্রাকের গাইবান্ধার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা শুরু করা হয় শ্রীমতি সান্ত্বনা রানীর। তারপর দিনাজপুর। পরে রংপুরে চিকিৎসাার প্রায় এক বছর চিকিৎসা শেষে ডাক্তার ঢাকায় চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন।

এর মধ্যেই কেটে যায় প্রায় দুই বছর। এরপর ২০২২ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া হয়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা শেষে দুই দফা পরিক্ষা-নিরিক্ষা পর রিপোর্ট চোখের কোনো সমেস্যা না থাকলেও ধরা পরে ব্রেইন টিউমার।

ঢাকার চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন দেশের বাহিরে (ভারতে) চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। পরে ১২ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ, দুই লাখ টাকায় জমি বন্ধক আর বেশ কিছুট টাকা ধার ঋণ করে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরে নেওয়া হয় ভারতের বেঙ্গালুরুতে। সেখানে ৭ অক্টোবর তার প্রথম দফায় ব্রেইন টিউমার অপারেশন করা হয়।

প্রথম দফা অপারেশনে ইনফেকশন হলে,২১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় আবারো করা হয় একই অপারেশন।

সুসান্ত রায় পাপন বলেন, বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক। আমি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আমার ছোট বোন রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুলে  পড়ে। আমদের এক বিঘা নিজস্ব আবাদি জমি। তাতেই আমাদের সংসার চলছিল। কিন্তু মার অসুস্থতায় চিকিৎসার পিছনে সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছি। চার মাস পর (ফেব্রয়ারিতে) মাকে আবার ভারতে ফলোয়াপে নিয়ে যেতে হবে। তাতে প্রয়োজন আরো ৪/৫ লাখ টাকা। আমাদের অর্থ পাওয়ার আর কোনো উৎস নেই।

ডাক্তার মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি টাকার অভাবে আমার মাকে হারাতে চাইনা। তাই মাকে বাঁচাতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছি ফেসবুকে। আমার মাকে বাঁচাতে আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন, আমাদেরকে আর্থিক সাহায্য করুন। আমার মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

মেয়ে সুষমা রানী প্রীতি বলেন, আমার মা প্রচন্ড অসুস্থ্য, হাটতে চলতে পারেনা। আপনারা আমার মায়ের জন্য আর্শীবাদ করবেন। আমি মায়ের জন্য প্রতিদিন পূজো দেই। যেন ইশ্বর আমার মাকে সুস্থ্য করে দেন। এসময় প্রীতি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। কান্ন জড়িত কন্ঠে মায়ের চিকিৎসার জন্য আর্তনাদ করেন অর্থনৈতিক সাহায্যের।

প্রতিবেশীরা জানান, চিকিৎসার পিছনে পরিবারটি প্রায় নিঃস্ব। এখন এই পরিবারটিকে রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য জরুরী, অনথায় একদিকে যেমন দুই সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হবে, অন্য দিকে টাকার কারণে চিকৎসার অভাবে অকালেই জীবন দিতে পাপনের মাকে। তারা সমাজের বিত্তবান ও দানশীল সংগঠনগুলোর ককাছে কাছে পরিবারটির জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান।

পলাশবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। আমি সুসান্ত ও প্রীতির পড়ালেখা সহ সব ধরনের সহযোগিতায় পরিবারটির পাশে আছি। একই সাথে পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্য করতে সকলের কাছে আবেদন জানান তিনি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –