• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

যেসব মৃত্যু শহীদি মর্যাদার অধিকারী

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  

প্রত্যেক মানুষকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ‘প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে বাস্তব সত্য মৃত্যু। আজ হোক কাল হোক যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কিন্তু কার কোথায় এবং কী ভাবে মৃত্যু হবে তা কেউ জানে না। কারণ এগুলো অদৃশ্য বা গায়েবি বিষয়। এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছে রয়েছে।

কোরআনে আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন নারীদের জরায়ুতে বা গর্ভাশয়ে যা থাকে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না সে কোন স্থানে বা জায়গায় বা দেশে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা: লুকমান, আয়াত: ৩৪)।

মানুষ পথেঘাটে চলাফেরার সময় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়। কেউ মৃত্যুবরণ করে আবার কেউ হায়াত থাকলে বেঁচেও যায়। এই যে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন বাকি ১৪ জনের অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। মৃত্যু তো একদিন মানুষের হবেই। পৃথিবী ছেড়ে তো সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনায় যারা মারা যান তাদের জন্য রয়েছে শহীদি মর্যাদা। সম্মানজনক মৃত্যু। 

হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ব্যক্তিরা ছাড়াও শহীদ সাতজন- (১) প্লেগে মৃত্যুবরণকারী। (বর্তমানে করোনাভাইরাসে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এ অংশের ভাষ্যমতে তারাও শহীদ)। (২) পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী। (এ অংশের ভাষ্যমতে পানিতে ডুবে যারা মারা যাবে তারাও শহীদ। (৩) আঘাতে মৃত্যুবরণকারী। (৪) পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী। (৫) আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী। (সুতরাং নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা শহীদ)। (৬) কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী। (৭) সন্তান প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী।’ (ইবনে মাজাহ)।

যেভাবে হোক মানুষের মৃত্যু একদিন হবেই। কিন্তু সাধারণ মৃত্যুর চেয়ে উত্তম মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। একজন মুমিনের কামনা-বাসনা সেই মৃত্যুই হওয়া চাই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ জিহাদ করেনি এমনকি মনে জিহাদের তথা শহীদি মৃত্যুর চিন্তাও করেনি, সে যেন মুনাফিকির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল।’ (মুসলিম)।

ফিকাহর কিতাবে এসেছে, শহীদি মৃত্যু দুই প্রকার। প্রথম ধরনের মৃত্যু হলো প্রকৃত বা আসল শহীদ। যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দেয়। এসব শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। 

কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, 

وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝো না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৪)।

আরেক ধরনের শহীদ হলো হুকুমি শহীদ। অর্থাৎ যারা যুদ্ধ করে শহীদ হয়নি, তার পরও শহীদের সওয়াবপ্রাপ্ত হবেন। তারা হলেন মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী, আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী ইত্যাদি। এরাও শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –