• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

রোগীর সেবায় মহানবী (সা.)

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২১  

প্রিয়নবী (সা.) ছিলেন গোটা পৃথিবীর জন্য রহমতস্বরূপ। মহান আল্লাহ তাঁকে রহমতস্বরূপ এই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তিনি সর্বদা সবার কল্যাণ চেয়েছেন। তাঁর ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে লাখো মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি রোগীদের সেবা করতেন। কেউ অসুস্থ হলেই তিনি তার খোঁজখবর নিতেন। তার জন্য দোয়া করতেন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন এবং তিনি একে মুসলমানের হক বলে আখ্যা দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি যে এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি—১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া, ৩. জানাজার পশ্চাদানুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশি করা (আল-হামদুলিল্লাহর জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা)। (বুখারি, হাদিস : ১২৪০)

রোগীর প্রতি রাসুলের সহানুভূতিতে কোনো জাগতিক উদ্দেশ্য ছিল না। রোগী অথবা রোগীর পরিবারকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য তিনি এসব করতেন না; বরং তিনি রোগীদের খোঁজখবর নিতেন একমাত্র আল্লাহর জন্য। নিজের দায়িত্ববোধ থেকে। উম্মতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) রোগাক্রান্ত হলেন। নবী (সা.) আবদুর রাহমান ইবনে আওফ, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে দেখতে এলেন। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে পরিজনের মাঝে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে! তাঁরা বলেন, না। হে আল্লাহর রাসুল, তখন নবী (সা.) কেঁদে ফেলেন। নবী (সা.)-এর কান্না দেখে উপস্থিত লোকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, শুনে রেখো, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারণে শাস্তি দেবেন না। তিনি শাস্তি দেবেন এর কারণে (এ বলে) জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয়ই মৃত ব্যক্তিকে তাঁর পরিজনের বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। উমর (রা.) এ (ধরণের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা আঘাত করতেন, কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন বা মুখে মাটি পুরে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৩০৪)

রাসুল (সা.) রোগীদের দেখতে গেলে তাদের জন্য দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোনো রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর কাছে যখন কোনো রোগীকে আনা হতো, তখন তিনি বলতেন, (উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজহিবিল বা-সা রব্বান নাসি ওয়াশফি ফাআনতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকমা)

অর্থ : হে মানুষের রব, আরোগ্য দান করো, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান করো, যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৭৫)

রাসুল (সা.) রোগীদের জন্য বিভিন্ন বিধিবিধান সহজ করে দিতেন। জাবির (রা.) বলেন, একদা আমরা কোনো এক সফরে বের হলে আমাদের মধ্যকার একজনের মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে যায়। ওই অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে সে সাথীদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি আমার জন্য তায়াম্মুমের সুযোগ গ্রহণের অনুমতি পাও? তারা বলল, যেহেতু তুমি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাই তোমাকে তায়াম্মুম করার সুযোগ দেওয়া যায় না। অতএব সে গোসল করল। ফলে সে মৃত্যুবরণ করল। আমরা নবী (সা.) -এর কাছে এলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হলো। তিনি বলেন, এরা অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন। তাদের যখন (সমাধান) জানা ছিল না, তারা কেন জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিল না। কারণ অজ্ঞতার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। ওই লোকটির জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্ট ছিল। আর জখমের স্থানে ব্যান্ডেজ করে তার ওপর মাসাহ করে শরীরের অন্য স্থান ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হতো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৬)

এমনকি রাসুল (সা.) রোগী দেখতে গিয়ে কখনো কখনো তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। অথচ কিছু অতি উৎসাহী মানুষ মনে করে, চিকিৎসা গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল বহির্ভূত কাজ। রাসুল (সা.) নিজেই রোগীদের চিকিৎসার আদেশ করে সেই ভুল ধারণার অবসান ঘটিয়েছেন।

মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধের দিন সাআদ (রা.)-এর চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে রুফাইদা নামক এক নারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো। তিনি আহতের চিকিৎসা করতেন। নবী (সা.) সকাল-সন্ধ্যায় সাআদ (রা.)-এর কাছ দিয়ে যেতে জিজ্ঞেস করতেন, তোমার দিন কেমন কাটল, তোমার রাত কেমন কাটল? তিনি তাঁকে (নিজ অবস্থা) অবহিত করতেন। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৩৯)

এভাবে রাসুল (সা.) রোগীদের সেবায় সর্বদা আত্মনিয়োগ করতেন।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –