• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

হাসি-কান্নার আধ্যাত্মিকতা

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০  

হাসি-কান্নায় জড়ানো মানুষের জীবন। হাসি-কান্না নিয়ে মানুষের সংসার, জীবনযাপন। মানুষ হাসি-কান্নার ভেতর বেড়ে ওঠে, বেঁচে থাকে। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু কাঁদে-হাসে; কারণে কিংবা অকারণে। সর্বোপরি জগতের সবাই হাসে আবার কাঁদে অথবা কাঁদে পরে হাসে। জগত্টা যেন হাসি-কান্নার মঞ্চ, হাসি-কান্নার আবাসস্থল। তবে সবার হাসি-কান্নার কারণ-অকারণ ব্যতিক্রমধর্মী। কেউ হাসে উচ্চৈঃস্বরে, কেউ মুচকি। তদ্রূপ কেউ রোদন করে দুঃখে ব্যথায় যন্ত্রণায় কিংবা খোদার ভয়ে। ইসলাম বলে হাসি হোক মুচকি ও পরিমিত। চোখযুগল ভিজে উঠুক খোদার ভয়ে।

অনর্থক হাসার মধ্যে কোনো ফল নেই। আছে বিদ্রুপ প্রহসন ও জাহান্নামে প্রবেশের লক্ষণ।

আল্লাহ চান মানুষ কম হাসুক। অথবা সেটা পরিমিত। এবং হাসি হোক মুচকি, স্ফীত আওয়াজের। অধিক হাসলে অন্তর মরে যায়। খোদার কথা শূন্য হয়ে যায় ভেতরাত্মা। দুনিয়ার বুকে অনর্থক উঁচু স্বরে হাসলে আখিরাতে পরিণাম ভয়াবহ হবে। আখিরাতে ওই ব্যক্তিকে কাঁদতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলা হিসেবে অনেক বেশি কাঁদবে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮২)

আল্লাহর অনুমতিক্রমে রাসুল (সা.)-কে জিবরাঈল (আ.) অনেক গোপন রহস্যের সংবাদ দিয়েছেন। তাঁকে দুনিয়ার জীবনে জান্নাত জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। তাঁর জানার পরিধি পৃথিবীর সবাইকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে। তাঁর পূর্বাপরের গুনাহ মাফ। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তিনি কম হাসতেন, বেশি কাঁদতেন। মানুষকে কম হাসতে ও বেশি করে কাঁদতে উপদেশ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৫, সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৩)

কান্না অন্তর নরম করে। অন্তরে প্রশান্তি আনে। দুঃখ হালকা করে। মানুষের মন রোদনকারীর প্রতি খুব সহজে আকর্ষিত হয়। আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীকে তিনি ভালোবাসেন। তাঁর দরবারে গুনাহ মাফে ক্রন্দনকারীকে মাফ করে দেন। তাঁর ভয়ে রোদনকারীর জন্য তিনি চিরসুখ ও আরামের জায়গা জান্নাতের ফায়সালা করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। যেভাবে দোহনকৃত দুধ আবার স্তনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১১)

অনর্থক কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। মানুষকে হাসানোর ইচ্ছায় কথা বলা পাপের কারণ। হাসাবার জন্য বেহুদা অর্থহীন কথা বললে জাহান্নামে জ্বলতে হয়। তিরমিজি শরিফে ‘লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলা’ অধ্যায়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) সনদের পরম্পরায় আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কথা বলে, যে প্রসঙ্গে সে মনে করে যে তাতে কোনো অসুবিধা নেই, এই জন্য সে ৭০ বছর জাহান্নামে অবস্থান করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৪)

মানুষ সব কথায় হাসে না। মজা-রস-প্রহসন ও কৌতুকের কথা হলো হাসির উপকরণ। সত্য কথায় হাসির রসদ কম থাকে। মিথ্যা বললে হাসির হিড়িক পড়ে যায়। হাসির রঙ্গমঞ্চ সাজানো যায় মিথ্যা বলে। অথচ হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা গুনাহের কাজ। বাহজ ইবনে হাকিম (রহ.) বর্ণনা করেছেন, তাঁর দাদা থেকে তাঁর দাদা বলেন, আমি মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক। সে নিপাত যাক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৫ )

হাসি-কান্নার এই আধ্যাত্মিক শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হোক।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –