• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

হাড়-চর্বি ছাড়া, ১০০ ভাগ হালাল মাংস বিক্রি করেন জমিলা কসাই

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২  

হাড়-চর্বি ছাড়া, ১০০ ভাগ হালাল মাংস বিক্রি করেন জমিলা কসাই             
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি হাটের জমিলা বেগম ওরফে জমিলা কসাই। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে লড়াই করে হয়েছেন সফল ব্যবসায়ী। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কসাই হিসেবে। কঠিন জীবনযুদ্ধে সব বাধাকে পেছনে ফেলেছেন জমিলা কসাই। পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা ও পুরস্কার।

মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার- জমিলা বেগমের মাংস বিক্রির দোকান। এ দোকানে মিলবে ১০০ ভাগ হালাল মাংস। সঠিক পরিমাপে হাড়-চর্বি বাদে মাংস বিক্রি করা হয়। বিয়ে বাড়ি, খৎনাসহ আশপাশের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জমিলার দোকানের মাংস বেশ জনপ্রিয়। দোকানটির বিশেষ গুণ হলো- এখানে ক্রেতার পছন্দ মতো মাংস দেওয়া হয়।

দুই দশকের টানা অভিজ্ঞতায় জমিলা বেগম ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত। এলাকায় তিনি ‘জমিলা কসাই’ নামেই পরিচিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী হাটে মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডারে খুব সকাল থেকে শুরু হয়েছে কর্মব্যস্ততা। কেউ দোকান গোছগাছ করছেন আবার কেউ গরু জবাই করে চামড়া আলাদা করছেন। জমিলা বেগম নিজেও গরুর চামড়া আলাদা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর দোকানে বসে মাংস কাটতে শুরু করলেন। 

এদিকে মাংস আসার আগেই দোকানের বাইরে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পরার মতো। জমিলা বেগম নিজে মাংস কাটছেন, ডিজিটাল পাল্লায় মাপছেন, আবার টাকা গুনছেন। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের কেউ দুই কেজি, কেউ পাঁচ কেজি আবার কেউ ২৫ কেজি পর্যন্ত মাংস কিনছেন। তার হাত যেন আরেক ডিজিটাল পাল্লা। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী যা পাল্লায় তুলছেন তা একেবারে সমপরিমাণ হয়ে যাচ্ছে।

সোমবার বাদে সপ্তাহের ছয়দিনই মাংস বিক্রি করেন জমিলা বেগম। তবে শুক্রবার মাংস বিক্রি বেশি হয়। অন্যদিন ৭-১০ মণ মাংস বিক্রি হলেও এদিন বিক্রি হয় ২০-২৫ মণ। প্রতিদিন গড়ে ৩-৪টি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেন জমিলা। শুধু নিজ এলাকার নয়, ক্রেতারা আসেন দূর-দূরান্ত থেকেও। বিশেষ করে বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ, গড়েয়া হাট, কাহারোল, বসুনিয়া, লাহিড়ী, কালমেঘ, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, খানসামা উপজেলা এমনকি ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী শহর থেকেও ক্রেতা আসেন জমিলার দোকানে মাংস কিনতে।

জমিলা কসাইয়ের ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক সমস্যা থাকায় ছোটবেলা থেকে ব্যবসায় মায়ের পাশে দাঁড়ানোর কারণে বেশিদূর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। তবে মাকে নিয়ে অনেক গর্ব হয়। মা বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি সংগঠন থেকে পুরস্কার পায়। ছেলে হিসেবে সেটা আমার জন্য গর্বের। মায়ের কারণে আজ আমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে পেরেছি। ৭-৮ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে আমাদের দোকানে।

জমিলা বেগম বলেন, ১৫ বছর বয়সে বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকার কসাই রফিকুল ইসলাম ভান্ডারীর সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। আমার প্রথম সন্তান জহুরুলের জন্মের পর আমার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে ব্যবসা নষ্ট করে ফেলেন। ২০০০ সালের দিকে স্বামীকে নিয়ে বগুড়া থেকে ঝাড়বাড়ী হাটে এসে একটি মাংসের দোকান শুরু করি। সে সময় দোকানে স্বামীকে সময় দিতাম। আস্তে আস্তে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা ধার-দেনা করে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান আমার স্বামী। তখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটতে থাকে। পাওনাদাররা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে মাংসের দোকান চালু করলাম। নিজে হাটে গিয়ে দেখে-শুনে গরু বাকিতে কিনতাম। পরদিন মাংস বিক্রি করে গরুর দামের সঙ্গে ৩০০-৫০০ টাকা বেশি দিতাম। এভাবে শুরু করে আস্তে আস্তে ক্রেতাদের কাছে মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। দিনদিন ব্যবসা বাড়তে থাকে।

জমিলা বেগম বলেন, মা-ছেলে মিলে আস্তে আস্তে শোধ করে দেই স্বামীর দেনা। ১১ শতক জমি কিনে বাড়ি বানাই। ছোট পরিসরে একটি গরুর খামারও শুরু করেছি। বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান দিয়েছি। মাংস বিক্রি শেষে সেখানেও সময় দেই। সব মিলিয়ে ছেলে জহুরুল, তার স্ত্রী, দুই নাতি এবং মেয়ে সোহাগীকে নিয়ে আল্লাহর রহমতে সুখেই আছি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –