• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

স্লুইস গেট-সেতুতে পাল্টে গেছে কৃষি-যোগাযোগ

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০২২  

দিনাজপুরের সদর ও বিরল উপজেলাকে ভাগ করেছে পুনর্ভবা নদী। দুপাড়ে প্রায় ২০টি গ্রামের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। নদীতীরের এসব মানুষের অধিকাংশই কৃষিজীবী। চাষাবাদে তারা পুনর্ভবা নদীর পানির ওপরই নির্ভরশীল।

খরা মৌসুমে সেচ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে গৌরীপুর-রানীপুর নামক জায়গায় পুনর্ভবা নদীতে নির্মিত হয়েছে সেতু ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো স্লুইস গেট। ৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা মাত্র। আগামী মাসে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, পুনর্ভবার ভাটিতে পশ্চিম পাড়ে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের রাণীপুর, কামদেবপুর, প্রাণপুর, বনগাঁও, শাহাপুর, ধর্মজৈন, গোয়ালিয়া পাড়া। আর পূর্বে সদর উপজেলার গৌরীপুর, ঘুঘুডাঙ্গা, আস্করপুর গ্রাম। নদীসংলগ্ন এসব গ্রামের মানুষ নদীতে পানি না থাকলে বিপাকে পড়ে।

শুকনা মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় চাষাবাদে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয় কৃষকদের। খরা মৌসুমে এসব এলাকার পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের ওপর নির্ভর করতে হয়।

সরজমিনে সেতু ও স্লুইস গেট এলাকায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ বেশ উৎফুল্লচিত্তে চলাচল করছে। স্লুইস গেটের দুই পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের মানুষের ভিড়। যেন এক বিনোদন কেন্দ্র। দুপাশেই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকানপাট। বিক্রি হচ্ছে নানা রকম ভাজা-পোড়া, চায়ের দোকান, ছোট বাচ্চাদের খেলনাসামগ্রী।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, প্রকল্পটিতে চার ব্যান্ড বিশিষ্ট রেগুলেটর ৬ মিটার চওড়া, ৬ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে ৯২ মিটার উইয়্যার (অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা)। নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২১ মিটার, প্রস্থ ৫.৩ মিটার আর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে ৫০০ মিটার।

তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও  এরই মধ্যে এলাকাবাসী এর সুফল পেতে শুরু করেছে। উদ্বোধনের আগেই এলাকাবাসী স্লুইস গেটের ওপর নির্মিত সেতুটির ব্যবহার শুরু করেছে। সেতুটি নির্মিত হওয়ার আগে নদীর পশ্চিম পাড়ের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষকে ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে জেলা সদরে আসতে হতো। উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য বাজারজাতকরণে কিংবা চিকিৎসায় হয় দীর্ঘ পথ ঘুরতে হতো কিংবা দিনের বেলায় নদীর পাড়ে এসে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বিশেষ করে রাতের বেলায় অসুস্থ রোগীদের নিয়ে পড়তে হতো চরম বিপাকে।

সদর উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের কৃষকরা, শুকনা মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নেমে যেত। শত শত একর জমি অনাবাদি থাকত। ১৫ থেকে ২০ ফুট ছোট গর্ত করে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেখানে থেকে ৭০ থেকে ৮০ ফুট গভীর করে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি তুলে পাইপের মাধ্যমে ক্ষেতে দিতে হতো। স্লুইস গেট নির্মাণ হওয়ায় নদীতে পানি থাকছে। পানির লেয়ারটা ওপরে উঠে আসছে। ফসল ফলাতে আর পানির কষ্ট থাকবে না নদীর দুই পাড়ের কৃষকদের। 

বিরল উপজেলার বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা অথচ ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার ঘুরে আমাদের দিনাজপুর শহরে আসতে হতো। বর্ষাকালে এক-দেড় ঘণ্টা নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে হতো নৌকার জন্য। কী যে কষ্ট হতো, তা বোঝানো সম্ভব নয়। স্লুইস গেটের সঙ্গে ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, গৌরীপুর স্লুইস গেটটির নির্মাণকাজ শেষ। আগামী মাসেই এর উদ্বোধন করা হবে। এটি নির্মাণের ফলে দুই উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি শুষ্ক মৌসুমে চাষের আওতায় আসবে। এ ছাড়া স্লুইস গেটের ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। যার সুফল এলাকাবাসী এরই মধ্যেই পেতে শুরু করেছে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –