জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞাময় ঐতিহাসিক ভাষণ
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত লাভ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের এই অর্জন মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিক ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্যের প্রতিশ্রুতি। মানবজাতির সর্বোচ্চ পার্লামেন্ট জাতিসংঘে অতিস্বল্প সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ও সদস্যপদ অর্জনে জাতির পিতার নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও সাফল্যগাথা এদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাঙালি জাতির জন্য উপস্থিত হয় ২৫ সেপ্টেম্বর এর আর একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান প্রথম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মাতৃভাষা বাংলায় এক যুগান্তকারী ভাষণ প্রদান করেন। জাতির পিতার এই ভাষণটি ছিল বিশ্বের অধিকার বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বিশ্ব শান্তির জন্য বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।
জাতিসংঘের সেক্রেটারিয়েট থেকে ইংরেজিতে ভাষণ দেয়ার কথা বঙ্গবন্ধুকে বলা হলে তিনি আগেই জানিয়ে দেন যে তিনি বাংলায় ভাষণ দেবেন। প্রিয় মাতৃভাষার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে তিনি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রামে সমর্থনকারী দেশ ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ছিল শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মিলিত সংগ্রাম। তিনি জাতিসংঘে এর মহান আদর্শ, শান্তি ও ন্যায়বিচারের বাণীর সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে বাংলার লাখো শহীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণপূর্বক বিশ্ব শান্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান জানান।
জাতির পিতা তার ভাষণে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার লক্ষ লক্ষ মুক্তিকামী মানুষের লড়াই ও ত্যাগের উদাহরণ টেনে বলেন, অন্যায় এখনও চলছে এবং বর্ণবাদও পূর্ণমাত্রা বিলুপ্ত হয়নি। জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও বর্ণবাদের অবসান ঘটাতে নূতন বিশ্বব্যবস্থার আহ্বান জানান তিনি। তিনি ফিলিস্তিন, জিম্বাবুয়ে এবং নামিবিয়ার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও মুক্তিসংগ্রামের কথাও বলেন।
বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে একদিকে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন অপরদিকে ক্ষুধায় আক্রান্ত দেশগুলোর জন্য জরুরি সহায়তার কথাও বলেছেন। তিনি অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে প্রতিটি মানুষের জন্য সুখী ও শ্রদ্ধাশীল জীবনের গ্যারান্টির তাগিদও দিয়েছেন দৃঢ়ভাবে। অনাহার দারিদ্র্য ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধভাবে ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। যে ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত সম্পদ ও প্রযুক্তিজ্ঞানের ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের মাধ্যমে একটি জাতীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত হবে যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি সুখী ও সম্মান জনক জীবনের ন্যূনতম গ্যারান্টি পাবে।
অসীম সাহসী ও দৃঢ়চেতা বঙ্গবন্ধু তার ভাষণের একটি বিরাট অংশজুড়ে একদিকে ফ্যাসিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী এবং বর্ণবাদীদের প্রতি সাবধানতার কথা বলেছেন অপরদিকে শোষিত মানুষের অধিকার ও মুক্তির কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন “আমি জীবনকে ভালোবাসী তবে আমি মানুষের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করতে ভয় পাই না”।
বঙ্গবন্ধু জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানান এবং বাংলাদেশসহ আলজেরিয়া এবং ভিয়েতনামের নাম উল্লেখ করে বলেন, এদেশগুলো অপশক্তির বিরুদ্ধে বিরাট বিজয় অর্জন করেছে। তিনি বলেন, চূড়ান্ত বিজয়ের ইতিহাস জনগণের পক্ষেই থাকে। তিনি সকল ন্যায়সঙ্গত জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং মুক্তিসংগ্রামের প্রতি একাত্বতা ঘোষণা করেন। মানবিকতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি রফতানিকারক ধনী দেশসমূহকে মোকাবিলায় গরিব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদও প্রদান করেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। সকলের সম্মিলিত রক্তস্রোতে অর্জিত হয়েছে এদেশের মহান স্বাধীনতা। এ ভাষণেই অন্তর্নিহিত ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ও যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশনা। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ অবধি অলিখিত এত সুন্দর সুগঠিত অর্থবহ ভাষণ কেউ দিতে পারেননি। তাইতো এই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে জাতিসংঘ কতৃক স্বীকৃত হয়েছে।
জাতিসংঘে ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর সে দিনের ভাষণটি ছিল আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ভাষণ। সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তৃতীয় বিশ্বের সদ্যস্বাধীন দেশের নেতা হয়ে বঙ্গবন্ধু দরাজ কণ্ঠে দৃরতার সাথে যে আবেগময় ভাষণ দিয়ে ছিলেন সকলে তার প্রশংসা করেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব কুর্টওয়াল্ড হেইম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমি সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। এ ঐতিহাসিক সম্মেলনে সমাগত অতিথিবৃন্দ এবং জাতিসংঘের ডেলিগেট বুলেটিন বঙ্গবন্ধুকে কিংবদন্তি নায়ক বলে আখ্যায়িত করে। ১৯৭৪ সালের বিরাজমান স্নায়ুযুদ্ধ ও উত্তর দক্ষিণ বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বিশ্বে পরাশক্তির চলমান আগ্রসনের বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জোরাল কণ্ঠে বিশ্বের মেহনতি নির্যাতিত আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বঞ্চিত মানুষের পক্ষে এ ভাষণ প্রদান করেন।
বিশ্বশান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘকে আরও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশের আহ্বান জানান। জাতির পিতার পথ অনুস্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। জাতিসংঘের পরিবেশ, শান্তিরক্ষা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সকল সেক্টরে বাংলাদেশ অনন্য ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশে আজ প্রথম স্থানে।
১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ১৩৬তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর মাতৃভাষা বাংলায় প্রদত্ত প্রজ্ঞাময় ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে পৃথিবীতে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২৫ সেপ্টেম্বর এ দিবসটি আজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়ক State Calendar এ অভিবাসী দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর বাংলায় প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণ আমাদের গর্বের ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে থাকবে চিরদিন।
লেখক: সাবেক তথ্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব।
সূত্র: জাগো নিউজ২৪.কম।
– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –- মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে: প্রধানমন্ত্রী
- আইন করেছি, মিনিকেট চাল থাকবে না: খাদ্যমন্ত্রী
- ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
- শহরে মোটরসাইকেল চলবে সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিতে
- তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের বিশেষ কোটা চালু হবে: প্রতিমন্ত্রী পলক
- ‘খাদ্যে ভেজাল রোধে ‘মনের ল্যাবরেটরি’ পরিষ্কার করতে হবে’
- ফার্মারস ক্লাইমেট স্মার্ট স্কুলের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত
- ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে’
- কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি
- হাকিমপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন রাজ
- ভোট পড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ: সিইসি
- ‘মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে’
- কুড়ানো শালপাতাই যাদের জীবিকার মাধ্যম
- ফুলবাড়ীতে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার
- প্রতিদিন দই খাওয়ার উপকারিতা
- ‘পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কাজ করছে টিসিবি’
- ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
- বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ
- ‘পোশাক শিল্পের মাধ্যমেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হবে’
- ১৩৯ উপজেলায় ভোট আজ, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন
- হাকিমপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম
- কাহারোলে বোরো ধানে বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন
- ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধ সচেতনতামূলক সভা
- দিনাজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ মো: আহছান হাবীব
- চোখের নিচের ত্বকে সব প্রসাধনী নয়
- শান্তর মান-ইজ্জত বাঁচালেন উগান্ডার অধিনায়ক
- হজ কাদের ওপর ফরজ, কাদের ওপর নয়?
- গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন
- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব রক্ষায় ভারতে আইনজীবী নিয়োগ
- ১৫০ উপজেলায় ৩ দিন মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ
- জনগণের কথা চিন্তা করে আইন তৈরি করতে হবে: আইনমন্ত্রী
- সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী
- দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট
- হাবিপ্রবিতে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন
- ৬ শতাধিক পটল গাছ উপড়ে ফেলল দুর্বৃত্তরা, দিশেহারা কৃষক
- রাণীশংকৈলে ভুট্টাক্ষেত থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- বীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- বীরগঞ্জে হবিবর রহমান স্মৃতি রোগ প্রতিরোধ গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন
- ইস্তিসকার নামাজের সময় ও বিধি-বিধান
- গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
- টানা ৬ দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু
- হজের জন্য মাহরাম না পেলে নারীদের করণীয় কী?
- দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের ৫০০ বৃক্ষের চারা বিতরণ-রোপণ
- ট্রান্সফরমার চোর চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেফতার
- জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান
- দিনাজপুরে হলিল্যান্ড কলেজে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- দিনাজপুরে অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে লিচুর মুকুল
- দাঁতের যন্ত্রণায় আইসক্রিম খেতে পারছেন না?
- ঘোড়াঘাটে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালিত
- রূপপুরে নতুন বিদ্যুৎ লাইন চালু মঙ্গলবার