• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অসুস্থ কিডনির ৭ লক্ষণ

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮  

কিডনি শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গের নাম। দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়াই এক জোড়া কিডনির মূল কাজ। এছাড়া রেচন প্রক্রিয়াও কিডনি অংশ নেয়। তবে তা যেকোনো মুহূর্তে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। আবার এর কর্মক্ষমতাও কমে যেতে পারে। তাই শুরুতেই যদি কিডনির সমস্যার লক্ষণ জানা যায়, তাহলে সমস্যা অল্প থাকতেই চিকিৎসার মাধ্যমে তা সমাধান সম্ভব।

চলুন কিডনির সমস্যায় কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

১. দুর্বলতা

দুর্বলতা কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এই দুর্বলতা আসে রক্তশূন্যতা থেকে। কিডনি যদি ঠিকমত কাজ না করে তাহলে রক্ত ধীরে ধীরে দূষিত হতে থাকে। যার কারণে রক্তে নতুন করে ব্লাড সেল উৎপন্ন হয় না। এছাড়াও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপ্রোটিন উৎপন্ন করতে পারে না। এই হরমোন বোন ম্যারো থেকে ব্লাড সেল উৎপাদনে সাহায্য করে।

২. শ্বাসকষ্ট

যখন কিডনির কার্যক্ষমতা হৃাস পায়, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সাথে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বনডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতা

কিডনির সমস্যায় চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতাও তৈরি করতে পারে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা, ঝাপসা দেখা এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক হয় তাহলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলাফলে রোগী কোমাতে পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।

৪. শরীরে চুলকানির উপসর্গ

কিডনির অক্ষমতায় শরীরে প্রিউরিটাস দেখা দেয়। প্রিউরিটাস আসলে চুলকানির অন্য নাম। শরীরের রক্তে যখন বর্জ্য পদার্থ মিশতে শুরু করে তখন চুলকানির উপসর্গ দেখা দেয়। এর কারণ বর্জ্যের মধ্যে ফসফরাস থাকে। যেসব খাবারে ফসফরাস থাকে যেমন দুধজাতীয় খাবার, সেগুলো হজমের পর ফসফরাস বর্জ্য হিসেবে মূত্রের সাথে বের হতে পারে না। যার কারণে এটি রক্তে মিশে চামড়ায় চুলকানি সৃষ্টি করতে থাকে।

৫. মূত্রের রং পরিবর্তন এবং রক্তক্ষরণ

কিডনির সমস্যায় মূত্রের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। কারণ, কিডনির অক্ষমতায় রেনাল টিউবিউলস এর ক্ষতি হয়, যা পলিইউরিয়ার সৃষ্টি করে। এর মানে হচ্ছে আপনার অধিক পরিমাণে মূত্র তৈরির কাজ করে। তবে কিডনির অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, মূত্রের পরিমাণ ততই কমবে। এবং মূত্রের রং গাঢ় হলুদ কিংবা কমলা রং হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে মূত্রের সাথে রক্তক্ষরণ এবং অত্যধিক ফেনা হতে পারে।

৬. অরুচি

শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। এটি রক্তে মিশে শরীরের প্রোটিন নষ্ট করে দেয়। কিডনির অক্ষমতায় শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না। রক্তে অত্যধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়া মুখে অরুচি, ওজন হারানোর মত সমস্যার সৃষ্টি করে।

৭. শরীরে ব্যথা

একটি জেনেটিক কন্ডিশনের কারণে শরীরের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে কিডনি এবং লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট বা গুটি তৈরি করে। এই সিস্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইড এক ধরনের বিশেষ টক্সিন বহন করে, যা শরীরের শিরা বা ধমনী গুলোতে ক্ষতি করতে পারে। একাধিক শিরার বা ধমনীর ক্ষতি হলে তা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে। এই ব্যথা সাধারণত ভোঁতা অনুভূতি, খোঁচা কিংবা জ্বলুনির মত হতে পারে। সাধারণত এই ব্যথাগুলো শরীরের পেছনের অংশে, পায়ে কিংবা কোমরে হতে পারে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিডনিতে সমস্যায় কোন ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না। তাই কিডনির নিয়মিত চেক আপ করে নেয়াটাই মঙ্গল।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –