• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আর পেছাবে না তফসিল; চাপ আসলেই আইনী ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮  

দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেশে প্রথমবারের মতো ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এক অনন্য নজির গড়তে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

এরইমধ্যে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কঠোর অবস্থানে থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রভাবশালীদের কাছ তেকে কোনো ধরনের চাপ আসলে শক্ত হাতে মোকাবেলা করা এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক আইনী ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এদিকে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের তফসিল পেছানোর পুণঃদাবি জানালেও এই দাবি গ্রহণ করার কোনো অবকাশ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইসি। আগামী ৩০ ডিসেম্বরই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে হবে জানিয়ে তফসিল না পেছানোর যৌক্তিক ব্যাখ্যও তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে অযৌক্তিক দাবি থেকে সরে এসে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিতেও বলেছে ইসি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এসব নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। অনুষ্ঠানে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করা। তিনশ’ আসনের গেজেট করার জন্য সময় দরকার। দ্বিতীয়ত হলো, টঙ্গীর ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। ইসিকে চিঠি দিয়ে এটি জানানো হয়েছে। এ সময় সারাদেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়। যাতে কোন সহিংসতা না ঘটে।

তিনি বলেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যেহেতু নির্বাচনে সবদল অংশ নিয়েছে, এতে আমরা খুশি হয়ে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ভোটের দিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছি। কিন্তু ভোটের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কে এম নূরুল হুদা বলেন, আপনারা দেশি-বিদেশি সব স্তরের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এ বছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। আমাদের দেশে কখনও নির্বাচন হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন, কখনও সেনাবাহিনী, কখনও কেয়ারটেকারের অধীনে। কিন্তু অন্যান্য নির্বাচন থেকে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ সংসদ বহাল থেকে, সরকার বহাল থেকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে এমন একটি নির্বাচন হয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা সেজন্য আনন্দিত, যে এই নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সে কারণে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।

সিইসি বলেন, নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। ভোট একটি উৎসব। ভোটের দিন ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে। ভোটের বুথ ছাড়া বাকি সব স্থানে পর্যবেক্ষকসহ সবাই যেতে পারবেন, এবং তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। নির্বাচন যেন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই পরিবেশ রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরই সৃষ্টি করতে হবে। এখন থেকে নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনাদের। কিভাবে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন, ভোটকক্ষ তৈরী করবেন সব দায়িত্ব আপনাদের। সবাই আন্তরিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের উপর জনগণের সন্দেহ হবে না।

প্রার্থী এবং রাজনীতিবিদরা সম্মানিত ব্যক্তি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অনেকেই এমপি ছিলেন, আবার অনেকে আছেন যারা এমপি ছিলেন না তারাও এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সাথে যদি সুসম্পর্ক রাখেন, তাহলে কেউই নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। তাদেরকে কখনো প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। তাদের সহযোগীতা করলে তারাও আপনাদের সহযোগী, বন্ধু হিসেবে কাজ করবে। বিরোধীতা করবে না। নিরপেক্ষতা হবে একমাত্র মাপকাঠি।

কেএম নূরুল হুদা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এবার নতুন আইনে এবং ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে। তাই জাতি রিটানিং কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালি ব্যাক্তিদের থেকে চাপ আসলে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব পালনে কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কমিশনের আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবেন। অতি উৎসাহী আচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি চালক হয়। নির্বাচন সুষ্ঠ ও সফল করতে হলে রিটানিং কর্মকর্তারা সেই গাড়ির ফুয়েল হিসাবে কাজ করে। তাই সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য এদের জনগুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করবেন।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পুনঃতফসিল দেয় ইসি। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, বাছাই ২ ডিসেম্বর। আর প্রার্থীতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –