• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে দিনাজপুরের কৃষকরা

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২৩  

সাধারণত আষাঢ়ের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত আমন ধান লাগানোর মৌসুম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমনের চাষ বৃষ্টি নির্ভর। তবে বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধান লাগাতে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের কৃষকরা। আমন আবাদে জমি প্রস্তুত ও রোপা লাগাতে জেলার কৃষকদের ভরসা এখন সেচ পাম্পের মাধ্যমে তোলা ভূ-গর্ভস্থ পানি। এতে একদিকে আবাদের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় সেচ নিয়েও ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকরা।

গত কয়েকদিনে জেলার সদর, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর ও খানসামা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বর্ষার ভরা মৌসুম হলেও চাষ করা জমিতে মাটি সাদা হয়ে ফেটে গেছে। মাটি ফেটে হয়েছে চৌচির। রোপণকৃত চারা রোদের তাপে পুড়ে গেছে। ধান গাছের পাতা হয়েছে লালচে-হলুদ।  কেউ কেউ শ্যালো পাম্প দিয়ে পানি তুলে ক্ষেত ভিজিয়ে দিচ্ছেন। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না পেয়ে প্রায় পুরোটাই সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৩১ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (চালে) ৮ লাখ ১২ হাজার ৩১৭ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে আমন লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। যা শতকরা হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৩ শতাংশ। জেলায় মোট সেচযন্ত্র রয়েছে ৭২ হাজার ৮০৪টি। এর মধ্যে গভীর নলকূপ ৩ হাজার ৫১০টি, অগভীর ৬৮ হাজার ৮৪১টি ও এলএলপি ৪৫৩টি। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ১৪৬টি সেচযন্ত্র চালু হয়েছে। যদিও কৃষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেচকাজে জেলায় মোট সেচযন্ত্রের অর্ধেকেরও বেশি চালু হয়েছে ।

চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক ইমরান সরকার বলেন, আমার নিজের জমি নেই। মানুষের জমি বর্গা নিয়ে ধান আবাদ করি। এবার বৃষ্টি নেই, খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছি। মানুষের সেচপাম্প থেকে ঘণ্টায় ১২০ টাকা দরে জমিতে পানি দিচ্ছি। এবার ১০ বিঘা জমিতে সুগন্ধি জাতের আমন ধান লাগাবো। তাহলে বোঝেন এই এতগুলো জমিতে ঘণ্টা ধরা পানি দিয়ে ধান লাগাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সময় মতো যদি পানি না হয় তাহলে এবার ধান উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে।

সদর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক রায়হান বাবু বলেন, প্রথম দিকে আকাশের পানিতে ধানের চারা রোপন করেছি দুই বিঘা জমিতে এখন মাটি ফেটে হয়েছে চৌচির। রোপনকৃত চারা রোদ্রতাপে পুড়ে গেছে। ধান গাছের পাতা হয়েছে লালচে-হলুদ। কাঙ্খিত বৃষ্টি না পেয়ে প্রায় পুরোটাই সেচ নির্ভর হতে হচ্ছে। সেচপাম্প দিয়ে পানি দিয়ে পোষায় না তেলের দাম বেশি সাথে সার কিটনাষক ও শ্রমিকের খরচ অনেক বেড়ে গেছ এতে করে আমন ধানের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুন হচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক সুবেত চন্দ্র রায় বলেন, গেল মাসের শেষে ও এই মাসের প্রথমদিকে কিছু বৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় জমিগুলো এক চাষ করে রাখি। তারপর আর বৃষ্টির দেখা নেই। তবে এখনো আমন লাগানোর সময় চলে যায়নি। আগাম আলু ও সরিষা চাষের চিন্তা মাথায় রেখে ধান আগে লাগাতে হয়। এজন্য আাকাশের বৃষ্টির পানির অপেক্ষা না করে সেচ দিয়ে ধান লাগাতে হচ্ছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ২০২০ সালের জুন-জুলাইয়ে জেলায় গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১ হাজার ২১ মিলিমিটার, ২০২১ এর জুন-জুলাইয়ে ৪৫৫, ২০২২ এর জুন-জুলাইয়ে ৬০১ এবং সর্বশেষ ২০২৩ এর জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫০৮ মিলিমিটার। তবে আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, আমনের মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। চলবে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত। তাছাড়া আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়। যে ধানটা দেরিতেই লাগানো হয়। অনেক কৃষক ধৈর্য হারিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। গত বছরও একই অবস্থা হয়েছিল। বর্ষা একটু দেরিতেই শুরু হয়েছিল। আশা করি এবারও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হবে। পানির জন্য বাড়তি খরচ রোধে কৃষকদেরকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –