• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের ছাত্র যমজ দুই ভাই

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২২  

ইলাল হোসেন রুমন ও রতন মিয়া যমজ দুই ভাই। তাদের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাস্য মিল। শুধু আকৃতিতেই নয়, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পছন্দের বিষয়, জীবনের লক্ষ্য সবই এক। তাদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নে। বর্তমানে তারা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। 

জানা গেছে, রতন মিয়া ও ইলাল হোসেন রুমন দুজনই ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৩.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ২০২০ সালে এইচএসসিতে রতন জিপিএ-৪.৪২ আর রুমন ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পিইসি ও জেএসসিতেও তারা একই গ্রেডে উত্তীর্ণ হন। 

রতন মিয়া বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই একই স্কুল, কলেজে লেখাপড়া করেছি। বর্তমানে লেখাপড়া করছি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের স্কুল ছিল মাগুরা উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ছিল ড. মো.আসাদুজ্জামান কলেজ। আমাদের ইচ্ছা ছিল দুই ভাই এক সঙ্গে লেখাপড়া করব। আল্লাহ আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দিয়েছেন। আমার ভাই রুমন অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিল, কিছুদিন আগে মাইগ্রেশন হয়ে অর্থনীতি বিভাগে এসেছে। আমরা দুই ভাই এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে পড়ালেখা করছি।

ইলাল হোসাইন রুমন বলেন, আমরা দুই ভাই একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। আমরা দুইজন পোশাক শেয়ার করে পরতাম এবং এক সেট বই শেয়ার করেই ক্লাস ওয়ান থেকে এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় এক সেট বই গ্রুপ স্টাডি করে পড়েছি। আমরা কোনো ধরনের প্রাইভেট পড়িনি বা কোচিং করিনি।

আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম পরিবারের পাশে থেকে পড়াশোনা করার জন্য আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।

রুমন ও রতনের বান্ধবী ফিরোজা আক্তার বলেন, প্রথম দিন যখন ওদের দুইজনকে আমাদের ক্লাসে একসঙ্গে দেখি, তখন আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। ওরা দুইজনেই খুব মিশুক। আমাদের ক্লাসে ওদের পেয়ে আমরা অনেক খুশি।

রুমন ও রতনের বন্ধু আশিক বলেন, আমরা ওদের পেয়ে খুবই আনন্দিত। আমার কাছে অবাক লেগেছে আরেক ভাই যখন মাইগ্রেশন করে আমাদের বিভাগে চলে এসেছে।

রুমন ও রতন বলেন, আমাদের বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ , মা গৃহিণী। আমরা তিন ভাই, এক বোন লেখাপড়া করছি। আমাদের পরিবারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই। আমাদের পরিবারের খরচ বহন করছে মামা ও খালা-খালুরা। আমরা খালার বাড়ি থেকেই লেখাপড়া করছি। আমাদের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার পরও আমরা এখন পর্যন্ত কোনো উপবৃত্তি পাইনি। এখন যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতো তাহলে আমাদের চলার পথ আরও সহজ হতো। 

তারা বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেন ভালোভাবে লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, যমজ দুই ভাই অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এটি এই বিভাগের জন্য গর্বের বিষয়। আশা করছি তারা সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নুরুজ্জামান খান বলেন, দুই ভাই একই বিভাগে ভর্তি হয়েছে জানতে পেরে অনেক খুশি হয়েছি। দুই ভাইয়ের জন্য শুভ কামনা রইল। আর আমার জায়গা থেকে যতটুকু সাহায্য করতে পারি করব। 

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –