• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চলে গেলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কণ্ঠস্বর রবীন্দ্রনাথ সরেণ

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪  

সমাজের পিছিয়ে পড়া সমতল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন মারা গেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বারকোনা গ্রামে নিজ বাসভবনে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুকালে  তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

রবীন্দ্রনাথ সরেণ দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা অসুখে ভুগছিলেন। গত ১ জানুয়ারি তাঁকে দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ্যতা বোধ করলে গত মঙ্গলবার তাকে বারকোনা গ্রামের বাড়ীতে নেওয়া হয়। শনিবার দুপুর দেড়টায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরের নিজ গ্রামেই তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

রবীন্দ্রনাথ সরেণ ব্যক্তি জীবনে কৃষিকাজের পাশাপাশি আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতা ছিলেন। আদিবাসী গবেষক হিসেবেও সূধীমহলে পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে নওগাঁর আঘোর নিয়ামতপুরে প্রথম সিঁধু-কানু চাঁদ ভৈরব স্মৃতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই অঞ্চলে আদিবাসীদের সংগ্রাম গাঁথা তুলে ধরেন। ১৯৯৬ সালে নওগাঁর মহাদেবপুরের নাটশালে তিনিই প্রথম কারাম উৎসব শুরু করেন ,যা পরবর্তীতে সকল আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গঠন করেন। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় তেভাগা চত্তওর সিঁধু কানুর ম্যূরাল নির্মানেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০০১সালে আলফ্রেড সরেন হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন যা জাতীয় পর্যায়ে শুধু না আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জায়গা করে নেয়। এছাড়াও ফুলবাড়ি কয়লা খনি বিরোধী আন্দোলনে আদিবাসীদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেন।

সমতলে আদিবাসীদের উপর যেখানেই ভূমি দখল, হত্যা,নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটিতে রবীন্দ্রনাথ সরেণ সোচ্চার ছিলেন।  ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নাচোলে  ইলা মিত্রকে এনে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ করেছিলেন তিনি। আদিবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে আদিবাসীদের যুক্ত করতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরেছেন তিনি। আদিবাসীদের ভূমির অধিকার ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন।

তাঁর মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে আদিবাসী গবেষক দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুল হক বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে আদিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে গেলেন রবীন্দ্রনাথ সরেণ। আদিবাসী গবেষনা পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলেন। আদিবাসী সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে গবেষনা কিংবা তথ্য উপাত্তের জন্য দেশের বড় বড় লেখক গবেষক সাহিত্যিক ও নাট্য নির্মাতারাও তাঁর স্মরণাপন্ন হতেন। দেশের মানুষ তথা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের স্মৃতিতে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ সরেণ।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –