• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

তিন দিনে ৯টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৪  

কৃষি নির্ভর জেলা দিনাজপুরে সরকারী কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এসব ইটভাটার মধ্যে চালু রয়েছে ২৪১টি। যার ১৭৫টি ইটভাটারই নেই কোন বৈধতা। মাত্র ৬৬টি ইটভাটা চলছে সরকারী অনুমোদন নিয়ে। এদিকে অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত তিন দিনে দিনাজপুরে ৯টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর এই অভিযান চালাতে গিয়ে দ্বিতীয় দিনে হামলারও শিকার হয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, হিমালয় পর্বত থেকে পানির সাথে বেয়ে আশা পলি মাটি তৈরি হতে ৫০ থেকে ১শ বছর সময় লাগে। এই পলিমাটি আমাদের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু এই পলি মাটি এখন ব্যবহার হচ্ছে ইট ভাটাসহ রাস্তা ভরাট বাড়ির আঙিনা ইত্যাদি কাজে। কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে না। কৃষি জমিতে ইটভাটা করলে কৃষি জমির ফলন হ্রাস পায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন এই কর্মকর্তার এই বক্তব্য এখন শুধুমাত্র কথাতেই রয়েছে। কৃষি নির্ভর এই জেলায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। সরকারী কোন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা এখন কৃষি নির্ভর এই দিনাজপুর জেলায় কৃষির জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইন—কানুনের তোয়াক্কা না করে উর্বর কৃষি জমির উপর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে, ঘনবসতি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ বান্ধব কয়লার বিপরীতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ট্রাক্টরের মাধ্যমে আশপাশের এলাকার ফসলি জমির মাটি এনে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অবৈধ ইটভাটার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। দিনে ও রাতের আধারে  ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন ভাটার মালিকেরা।

পরিবেশ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক রুনায়েত আমিন রেজা বলেন, দিনাজপুরে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ২৪১টি। এই ২৪১টির মধ্যে ১৭৫টি ইটভাটাই অবৈধ। বৈধ ইটভাটা মাত্র ৬৬টি। তিনি বলেন, অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু হয়েছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুলতানা সালেহা সুমীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে গত তিন দিনে দিনাজপুরের ৯টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে কাঁচা ইট ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং ভাটাগুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতে এই ৯টি ইটভাটা মালিককে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযানের তৃতীয় দিনে বুধবার (৬ মার্চ) দিনাজপুর সদর উপজেলার কিষানবাজার পূর্ব রামপুর এলাকায় দিনাজপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মমিনুল ইসলামের মেসার্স এম.বি.এম ব্রিক্স এবং একই এলাকার নুর আমীন শাহ গং—এর এম.এইচ ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। অবৈধভাবে এই দুটি ভাটা পরিচালনার দায়ে দুই ভাটা মালিককে ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে ইটভাটার কাঁচা ইট ধ্বংস করে দেয়া হয় এবং বুলডোজার দিয়ে চিমনি ভেঙ্গে ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রথম দিনে সোমবার (৪ মার্চ) দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ৫টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

আর দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্ব সাইতাড়া রাবারড্যাম সংলগ্ন মোকারম হোসেনের মালিকানাধীন এমএইচবি ব্রিক্স নামক অবৈধ ইটভাটায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুলতানা সালেহা সুমী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের বহন করা গাড়ির সামনের ও পিছনের দুটি গ্লাস এবং ভেকুটি ভেঙে দেয় এবং তাদের উপর হামলা চালায়। এতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রুনায়েত আমীন রেজা এবং পুলিশসহ ৬ জন আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ বিষয়ে চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক রুনায়েত আমিন রেজা জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –