• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পাঁচ বছরে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর তিন জেলা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়। এ তিন জেলায় বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। এতে করে ধান, গম, ভুট্টা, আলুর পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ অঞ্চলে চলতি মৌসুমেও সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতে করে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরিষা চাষে ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমিতে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুও। পাশাপাশি সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ করে মধু উৎপাদনের মাধ্যমে অনেক বেকার যুবকের জীবিকার পথও সুগম হয়েছে। আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের চাহিদাপূরণ ও ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সরকার তেলজাতীয় ফসলের বৃদ্ধির জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গত তিন বছরে এ প্রকল্পের মাধ্যমে আশাতীত ফলাফল পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পের অধীনে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধি এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ের ১০ উপজেলা প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে কাজ শুরু করা হলেও এরইমধ্যে ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় তিন জেলার সব উপজেলাতেই এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর অনেক জমি পরবর্তী বোরো ধান বপনের আগ পর্যন্ত অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করে কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তারা জানান, সরিষা তোলার পর অনায়াসে বোরো ধান বপন করা সম্ভব। পাশাপাশি মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদের কারণে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রোগবালাই দমনেও সহায়ক হচ্ছে। তেলজাতীয় ফসলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সরিষার আবাদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ রবি মৌসুমে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় তিন জেলা মিলে মোট ২৫ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। আর এতে ফলন হয় ৩৯ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। সরকারের কৃষিবান্ধব প্রকল্পের কল্যাণে তিন জেলায় গত পাঁচ বছরে সরিষার আবাদ আশাতীত বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে মোট ৪৫ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। এতে ফলন হয় ৬৯ হাজার ৬৮৯ মেট্রিক টন সরিষার। চলতি মৌসুমেও ৫৬ হাজার ৭৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আর এতে ৮৬ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরে ৩ একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া এলাকার কৃষক শাহিনুর আলম। তিনি জানান, ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। আগে সামান্য সরিষা আবাদ করে আলু আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় সরিষার আবাদ বাড়িয়েছেন। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মাধবপুর গ্রামের কৃষক রিয়াজুল ইসলাম জানান, আগে তিনি সারিষার আবাদ করতেন না। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি গত তিন বছর ধরে সরিষার আবাদ করছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে প্রচুর পরিমাণে লাভবান হচ্ছেন। তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের দিনাজপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, বৃহত্তর দিনাজপুরে এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জমিগুলোকে দুই ফসলের মধ্যবর্তী সময়ে চাষের আওতায় এনে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তেলের ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকেরা সরিষার আবাদের মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বৈদেশিক নির্ভরতা কমছে আবার সরিষা আবাদের কারণে পরবর্তী ফসলে সারের খরচও কমছে। জমির উর্বরতাও বাড়ছে। – দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –