• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

প্রাথমিকের নয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৩  

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা  গ্রহণ ও মামলা প্রদানের জন্য লিখিত সুপারিশ করেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আছেন পাঁচজন। ওই নয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীকে যৌন হেনস্তা, যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়া এবং ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা সহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে সেসব অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষককে শোকজ করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের অধিকাংশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়া এবং কোন ধরণের ছুটি না নিয়েই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা। অনেকের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ বিদ্যালয়ে দেরিতে উপস্থিত হয়েও হাজিরা খাতায় বিদ্যালয় শুরুর সময় বসিয়ে স্বাক্ষর করা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এই উপজেলায় মোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৭টি। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ২নং সিংড়া ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯টি। আর সবচেয়ে কম প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৪নং ঘোড়াঘাট ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৭টি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৭ জুলাই আবিরের পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে মাত্র একজন সহকারী শিক্ষককে উপস্থিত পান শিক্ষা কর্মকর্তা। স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে খেলাধূলায় মগ্ন। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষর অণিতা রানী, সহকারী শিক্ষক এজাজুল হক, নাসরিন খাতুন, পুষ্পআরা এবং কেয়ারা কিস্কুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চলতি মাসের ৭ তারিখে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সুপারিশ করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

এছাড়াও উপজেলার বাঁশমুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ জেড এম রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানাকে উত্যক্ত করা এবং মোবাইলে অশ্লীল খুদে বার্তা পাঠানোর অভিযোগ উঠে। তদন্তে এসব ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই মন্ডল। পরে গত মে মাসের ২৫ তারিখে প্রমান সহ অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক এ জেড এম রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।

এদিকে কুলানন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মঞ্জুরী বেগমের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ছুটি ছাড়াই গত জানুয়ারী মাসের ১ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮  তারিখ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত থাকলেও, তার মেয়ে শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় ফাঁকা ঘর গুলোতে স্বাক্ষর করে যান। এ ঘটনায় তাকে বিভাগীয় ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

একই ভাবে বৈদড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) শিরিনা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত মে মাসের ৭ তারিখে তাকে বারপাইকেরগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করে প্রজ্ঞাপন জারী হলেও, তিনি বদলীকৃত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেননি। একই মাসের ১৭ তারিখ তাকে কৈফিয়ত তলব করে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। তবে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় গত ২৬ জুলাই সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ এর (খ) অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা করার জন্য সুপারিশ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

এমনই বেলওয়া আদিবাসী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও শিক্ষক হাজিরা খাতায় অ্যাডভান্স স্বাক্ষর করা এবং ছুটি না নিয়েই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা। এছাড়াও যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়া এবং নানা অজুহাতে প্রায়শই নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিদ্যালয় ত্যাগের অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৬ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সুপারিশ করা হয়েছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘আকর্ষিক পরিদর্শনে গেলেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়া এবং ঠিকমত পাঠদান না করানোর প্রমাণ মিলছে হরহামেশাই। আমরা তাদেরকে শোকজ এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছি। তবে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় এবং বারবার শোকজ করা সত্ত্বেও যেসব শিক্ষক নিজেদেরকে শোধরায়নি, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আমরা লিখিত সুপারিশ করেছি। এই উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার মান বাড়াতে এবং শিক্ষকদেরকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফেরাতে আমরা যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি।’

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –