• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচন

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

পৃথিবীর অন্যতম সেরা বাংলাদেশি জাত ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ ছাগলের জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গবেষকদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের এই স্থানীয় জাতের ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচনের তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পশুপালন অনুষদের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য মো. জসিমউদ্দিন খান।

গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন পশুপ্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক। তাঁর সাথে ছিলেন বাকৃবি এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) একদল গবেষক।

রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা এনসিবিআই থেকে তা নিবন্ধন পেয়েছে।

গবেষণা সহযোগী ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক সামছুল আলম ভূঞা ও পোলট্রি বিজ্ঞানবিভাগের অধ্যাপক বজলুর রহমান মোল্লা এবং রাজধানীর বিএলআরআই’র ছাগল ও ভেড়া উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানী মো. আব্দুল জলিল, মো. পনির চৌধুরী ও নূরে হাছনি দিশা এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের গৌতম কুমার দেব।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষকেরা জানান, ব্ল্যাক বেঙ্গল একটি ছোট জাতের বাংলাদেশি ছাগল। সুস্বাদু মাংসের এ জাতটি বাংলাদেশে ‘গরীবের গাভী’নামে পরিচিত। বর্তমানে দেশে প্রায় ২ কোটি ৭৬ লাখ ছাগলের ৯০ ভাগই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের। প্রতি প্রসবে একাধিক বাচ্চা প্রদান, দ্রুত প্রজননশীল ও উন্নত মানের চামড়া দেওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী এ জাতটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিকটন ছাগলের মাংস উৎপাদিত হয় যা মোট উৎপাদিত গবাদিপশুর মাংসের ২৫ ভাগ। এই গুরুত্ব বিবেচনায় জাতটির জিনোম সিকোয়েন্স করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ওজন বৃদ্ধির হার, দুধ উৎপাদন, বাচ্চা উৎপাদন হার, রোগ প্রতিরোধ ও মাংসের গঠন সংক্রান্ত জিন সনাক্ত করে ছাগলের জাত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।

এ গবেষণায় ছাগলের কোষের নিউক্লিয়ার ও মাইটোকন্ড্রিয়াল ক্রোমোসেম থেকে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। জিনোম হচ্ছে কোনো প্রজাতি বা জীবের মোট নিউক্লিওটাইড সমষ্টি। অর্থাৎ কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।

জীবের অঙ্গসংস্থান, জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াসহ সকল জৈবিক কার্যক্রম সংগঠিত হয় জিনোমে সংরক্ষিত নির্দেশনা দ্বারা। একটি জীবের জিনোমে সর্বমোট জিনের সংখ্যা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং বিন্যস্ত কাজ পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স থেকেই জানা যায়।

ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশি বিশুদ্ধ জাত থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নভেম্বরের শুরুর দিকে জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয়।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের ১২৫ গিগাবেজ প্রাথমিক নিউক্লিউটাইড ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এটি করা হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে জিনগুলোর অ্যাসেম্বেল করা হয়। এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফল থেকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বর্তমানে উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য জসিমউদ্দিন খান বলেন, ইলিশের পরপরই ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচন প্রমাণ করে আমরা গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছি। মৌলিক গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরণের সহযোগিতা করবে। উৎপাদন সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ জাতটির উন্নয়নে আরও গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জরুরি। দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –