• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মিনিটেই নকল ‘স্মার্ট কার্ড’, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশি কর্মীরা

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৪  

বিদেশগামীদের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র একের পর এক ‘বিএমইটি স্মার্ট কার্ড’ জালিয়াতি করে যাচ্ছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। এ গ্রামের মো. আল আমিন নামের এক যুবক সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে হাজির হন একই গ্রামের দালাল সুলতান মাহমুদ মাবুদের কাছে। এ সুলতান মাহমুদ মাবুদ গত কয়েক বছরে গ্রামের যুবকদের বিদেশ পাঠানোর কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি তাজিকিস্তান পাঠানোর কথা বলে কালাই উপজেলার ছয় যুবকের সঙ্গে প্রতারণা করেন মাবুদ।

প্রতারণার শিকার যুবকরা হলেন- একই উপজেলার খায়রুল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার, মেহেদী হাসান, আল আমিন ও আবু তাহের। 

জানা গেছে, এ ছয় যুবক বিএমইটি স্মার্ট নকল হওয়ার কারণে বিদেশে যেতে পারেননি। তাদের মতো দোলা, ফারজানা, আলফাজ, হাফিজ ও রুহুল আমিন একই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক জেনে বিমানবন্দরে গিয়ে তারা জানতে পারেন তাদের কাছে থাকা বিএমইটি ‘স্মার্ট কার্ড’ নকল। তাদের বিমানবন্দর থেকেই গ্রামে ফিরতে হয়েছে।

ভুক্তভোগী মো. আল আমিন বলেন, ২০২২ সালে জানুয়ারিতে দালাল সুলতান আমাকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ৫ লাখ টাকা নেন। এভাবে আরও পাঁচজনের কাছে একই টাকা নেন। কিন্তু ঐ বছর তিনি আমাদের মালয়েশিয়া পাঠাতে পারেননি। তখন আমরা তার কাছে দেওয়া টাকা ফেরত চাই। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে আমাদের তাজিকিস্তান পাঠাবেন বলে আশ্বাস দেন।

সাধারণত বৈধভাবে বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) নিবন্ধিত হতে হয়। এই নিবন্ধন জেলা অফিস কিংবা অনলাইনে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে করা যায়। নিবন্ধিত হওয়ার পর কর্মীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ক্লিয়ারেন্স হিসেবে তাকে ‘স্মার্ট কার্ড’ দেওয়া হয়। এই কার্ড সংগ্রহ করে বিদেশে যেতে হয় কর্মীদের। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারির মধ্যে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে ২০টি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা জানাজানির পর ১০ জানুয়ারি ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএমইটি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সেই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। কমিটিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘আমি প্রবাসী’ ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) প্রতিনিধি রাখা হয়। প্রতিবেদনে তারা চূড়ান্তভাবে কাউকে দায়ী না করলেও ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের সিস্টেমে কিছুটা দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমি প্রবাসীর’ সিস্টেমে লগইন করে রেখে দিলে লম্বা সময়েও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয় না, মানে ‘সেশন আউট’ নেই এতে। এ ছাড়া পাসওয়ার্ড সুরক্ষায় ওটিপি (ওয়ান টাইম পিন) ব্যবস্থাও নেই। এসব কারণে বা সিস্টেমে ত্রুটির সুযোগ নিয়ে হ্যাকাররা অতিরিক্ত মহাপরিচালকের আইডি ব্যবহার করার সুবিধা নিয়ে বাতিল কার্ড অনুমোদন করেছে।

এদিকে এ পরিস্থিতিতে জালিয়াতি বন্ধে সার্ভার সরিয়ে নিচ্ছে বিএমইটি। বর্তমান সার্ভারটি বিএমইটির কার্যালয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখানে এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আর এটি অনেক পুরনো সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। তাই চাইলেও জালিয়াতি বন্ধ করা যাচ্ছে না, জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায় না। তাই আধুনিক ব্যবস্থাপনায় বিএমইটির সার্ভার ব্যবস্থাপনা বিসিসির কাছে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ তথ্য সরানো হয়ে গেছে। শিগগিরই পুরো কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা করছে বিএমইটি।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো আইটি শাখার ইন্সট্রাক্টর (আইএমইটি) মো. সাইফুল ইসলাম মামুন বলেন, সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। কিছুদিন আগে এ রকম অভিযোগ ওঠার পর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়। এখন স্মার্ট কার্ড জালিয়াতের ঘটনা হলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –