• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মিষ্টির প্যাকেট বানিয়ে যেভাবে স্বাবলম্বী অর্চনা

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৩  

 
বিয়ের পরের বছর মারা যান স্বামী। কিছুদিনের মধ্যেই মলিন হয়ে যায় স্বপ্নের সাজানো সংসার। গর্ভাবস্থায় সন্তানের কথা চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শুরু করেন মিষ্টির প্যাকেট তৈরির কাজ। এ থেকে উপার্জিত টাকায় একমাত্র মেয়েকে করিয়েছেন স্নাতক পাস। দিয়েছেন বিয়েও। নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী।

বলছি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার অর্চনা সাহা (৪৩) এর কথা। ২৫ বছর আগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কাদিম নগর এলাকার রনজিত সাহার মেয়ে অর্চনার সঙ্গে পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউয়িনের হয়বৎপুর গ্রামের দিলিপ চন্দ্রের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর খানেকের মাথায় হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন দিলিপ চন্দ্র। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার। তখন তিন মাসের গর্ভবতী ছিলেন অর্চনা সাহা। স্বামীর অকাল মৃত্যু যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার। একদিকে স্বামী হারানো বেদনা, অন্যদিকে গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। ঠিক কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।

তখনই বাবার বাড়ি এলাকার মানুষের মিষ্টির প্যাকেট তৈরির কথা মনে হয় তার। সেই ভাবনা থেকে শুরু হয় অর্চনা সাহার মিষ্টির প্যাকেট তৈরির কাজ। এক ও দুই কেজি- এ দুই সাইজের মিষ্টির প্যাকেট বানান তিনি। আগে দাম কম হলেও বর্তমানে প্রতি একশ’ প্যাকেট বিক্রি করেন ৭০০ টাকায়। বাহারি রংয়ের এসব প্যাকেট লেখা থাকে নিমন্ত্রণ, অতিথি আপ্যায়ন, অতিথি সেবা ছাড়াও ভিন্ন
ভিন্ন নাম।

অর্ডার পেলে প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাকেট তৈরি করেন দেন। এজন্য সময় নেন সাত থেকে ১০ দিন। সে ক্ষেত্রে ক্রেতাকে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। পার্বতীপুরের শহরের বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও যশাইহাট, আমবাড়ী হাট, ভবের বাজার, হাবড়াহাটসহ পার্শ্ববর্তী সৈয়দপুর উপজেলায় যায় অর্চনার তৈরি এসব মিষ্টির প্যাকেট।

অর্চনা সাহা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন। তবে কেউ তাকে কাজ দেননি। এ কারণে তিনি নিজ বাড়িতেই শুরু করেন মিষ্টির প্যাকেট তৈরির কাজ। এ কাজ থেকে পাওয়া টাকায় অনেক কষ্টে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। স্নাতক পাসের পর মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন।

প্যাকেট তৈরি করে প্রতি মাসে কত টাকা হয়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো মাসে বেশি আবার কোনো মাসে কম অর্ডার থাকে। আগে প্রিন্টিং মেশিনের প্রচলন কম ছিল। তখন হাতে তৈরি প্যাকেটের চাহিদা ছিল বেশি। এখন কমে গেছে চাহিদা। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বেশিভাগ মানুষ এখন ঢাকা থেকে ডিজিটাল প্রিন্ট করে আনেন। এখন আমার প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় হয়। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে মিষ্টির বক্স তৈরির অর্ডার পেলে একটু লাভ বেশি পাই। সে ক্ষেত্রে দিনাজপুর শহর থেকে কাগজ প্রিন্ট করে নিয়ে আসতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী বাদল চন্দ্র সাহা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে অর্চনা সাহা মিষ্টির প্যাকেট বানানোর কাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তিনি এ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এর থেকে পাওয়া টাকায় তিনি জীবনযাপন করেন। একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এক সময় তাকে কষ্টে জীবনযাপন করতে দেখেছি। এখন আগের থেকে ভালো আছেন।

মিষ্টির প্যাকেট নিতে আসা হোটেল ব্যবসায়ী রহিম শেখ জানান, হাবড়ায় তার একটি ছোট্ট মিষ্টির দোকান আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী অর্চনা সাহার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বানিয়ে নিয়ে যান।

মোমিনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমি অর্চনা সাহার বিষয়টি শুনেছি। তাকে বিধবা ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –