• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সেকাল একাল

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯  

সৈয়দপুরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে অনেক আগেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেএই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে উন্নততর যোগাযোগ স্থাপনে সৈয়দপুর বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে নতুন বিমান রুট তৈরি হবে। বিমানবহরকে আরো নিরাপদ ও আরামদায়ক করার পাশাপাশি, আধুনিক ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

এর প্রমাণ এখন সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গেলেই দেখতে পাওয়া যায়। এখন সরকারী এবং বেসরকারি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০টি ফ্লাইট সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিচালনা করা হয়। অথচ বছর ১৫ আগেও সপ্তাহে একটি কিংবা দু'টি ফ্লাইটের রেকর্ড ছিল। পনের বছর আগে বেশীরভাগ সময়ই একটি ফ্লাইটের যাত্রী মিলতো না, সে কারণে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো। তারপর যাত্রী সংকটের মুখে বিমান তাদের অপারেশন বন্ধ করে দেয়। একসময় ইউনাইটেড এয়ার একটি ফ্লাইট চালু করে, সেটি সৈয়দপুর থেকে যাত্রী নিয়ে রাজশাহী ঘুরে ঢাকা যেত।

আর এখন পনের বছরের ব্যবধানে দিনে ১০টি ফ্লাইট চলাচল করছে ছোট এই বিমানবন্দরটিতে। নভোএয়ারের ৫টি, ইউএস বাংলার ৪টি ও রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের ১টি ফ্লাইট। শিগগিরই নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এবং বাংলাদেশ বিমান আরও একটি করে ফ্লাইট যোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন ফ্লাইটের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩টিতে।

ফ্লাইটের সাথে সাথে যাত্রী সংখ্যাও বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। বেড়েছে সুযোগ সুবিধা। আগে ভাগে বুকিং না দিলে টিকেট পাওয়া দুষ্কর। যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি লাভজনক হওয়ায় নতুন ফ্লাইট যোগ করতে যাচ্ছে সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলাকে টার্গেট করে ১৯৭৯ সালে চালু করা হয়, সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। তখন শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট এই বিমানবন্দর ছেড়ে যেত। ২০০৬ সালে যাত্রী সংকটের কারণে অপারেশন বন্ধ করে দেয় বিমান বাংলাদেশ। আর এখন যাত্রী চাপের কারণে অভ্যন্তরীণ থেকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন।

এই পরিবর্তন শুধুমাত্র আকাশপথে নয়, সড়ক পথও আমূল বদলে গেছে। বছর বিশেক আগে রংপুর বিভাগের মধ্যে শুধু রংপুর থেকে একটি এসি বাস ঢাকায় যাতায়াত করতো। খুব সম্ভবত রংপুরের মালিকানাধীন মোতাহার গ্রুপ 'আগমনী এক্সপ্রেস' নামে এই কোচটি চালু করেছিলেন। অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই চালু হয় এই কোচটি। এরপর আস্তে আস্তে দিনাজপুর, নীলফামারীতে এসিবাস চালু হয়। অনেক পরে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ে এসিবাস চালু হয়। এখনকার চিত্রটা একেবারে ভিন্ন। অনেকগুলো কোম্পানির এসিবাস রংপুরের ৮ জেলায় নিয়মিত যাতায়াত করছে। প্লেনের মতো সাধারণ পরিবহনের আগে এসি কোচের টিকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে কোম্পানিগুলো নতুন নতুন কোচ যুক্ত করছে।

বিশ বছর আগে ছিলো একটি মাত্র হাইওয়ে, এখন জালের মতো ছড়িয়ে জেলাগুলোকে যুক্ত করেছে। একটি নয় একাধিক মাধ্যমে এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলায় যোগাযোগ করা যায়।

এ থেকে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। প্রকৃত অর্থেই উত্তরাঞ্চল থেকে এখন মঙ্গা নির্বাসিত বলা যায়। আগে যাদের তিনবেলা খাবার জুটত না, তারা এখন সচ্ছল। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো। আগে গ্রামের পর গ্রাম ছিল মাটির বাড়ি, এখন মাটির ঘর কালে-ভাদ্রে দেখা যায়। বদলে গেছে চেনা গ্রাম। মাটির বাড়ি রূপ নিয়েছে ইটের বাড়িতে। ধীরে ধীরে নগরমুখী হচ্ছে এসব গ্রাম। কার্তিকের মঙ্গাকে নির্বাসিত করতে বোরো (ইরি) ধান দারুণ কাজে দিয়েছে। বাড়তি চালের ফলনে তিনবেলা ভাত খাওয়া মানুষগুলো আগের থেকে অনেক নির্ভার। আগে এই লোকগুলোকে আমনের উপর নির্ভর করতে হতো, যা বেশিরভাগ সময়ে বন্যায় নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু আগের সেই অবস্থা এখন আর নেই।

এই সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রংপুর বিভাগে গড়ে উঠতে যাচ্ছে অনেকগুলো অর্থনৈতিক জোন। যা এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনমান বদলে দেবে বলে সবার বিশ্বাস। রংপুর অঞ্চলে কোন শিল্পাঞ্চল ছিল না, কিন্তু তারপরেও দমে নেই এসব অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা। ঢাকায় গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কর্মরত কর্মীদের শতকরা ৮০ শতাংশই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাওয়া। এ বছরের শুরুতে সরকার রংপুর বিভাগে গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দ্রুত এগিয়ে চলছে গ্যাস সংযোগ স্থাপনের কার্যক্রম। কারণ এই অঞ্চলে শিল্পায়ন জরুরি। আর শিল্পায়নের জন্য গ্যাসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে রংপুর অঞ্চল একসময় দেশের অন্যসব অঞ্চলকে ছাড়িয়ে যাবে বলে রংপুরবাসীর বিশ্বাস।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –